Thursday, 9 March 2023

পূর্ণসংখ্যার গুণ

    আমরা যখন একটি পূর্ণসংখ্যার সাথে অপর একটি পূর্ণসংখ্যার গুণ করব, তখন প্রথমেই পূর্ণসংখ্যাগুলির চিহ্নের গুণ করব, তারপর পূর্ণ সংখ্যা গুলির সাংখ্যমান গুণ করে গুণফল নির্ণয় করব। 

    এখানে আমরা দেখব ধনাত্মক চিহ্নের সাথে ধনাত্মক চিহ্নের গুণ হলে আমরা ধনাত্মক চিহ্ন পাই। যেমন- 
5 × 2 = 10 

    আবার ঋণাত্মক চিহ্নের সাথে ঋণাত্মক চিহ্ন গুণ হলেও আমরা গুণফলে ধনাত্মক চিহ্ন পাই। যেমন- 
(-4) × (-5) = 20 

    অর্থাৎ আমরা বলতে পারি, দুটি একই চিহ্নের গুণ হলে, আমরা ধনাত্মক চিহ্ন পাব। 

    তবে একটি ধনাত্মক চিহ্নের সাথে একটি ঋণাত্মক চিহ্নের গুণ হলে অথবা একটি ঋণাত্মক চিহ্নের সাথে একটি ধনাত্মক চিহ্নের গুণ হলে, আমরা ঋনাত্মক চিহ্ন পাব। যেমন- 
3 × (-2) = -6 = - ( 3 × 2 ) 
(-7) × 3 = -21 = - ( 7 × 3 )  ইত্যাদি। 

    আমরা নিজেরা কয়েকটি পূর্ণসংখ্যার গুণ অনুশীলন করলে দেখতে পাব, যোগ এবং বিয়োগের মতোই পূর্ণসংখ্যার গুণও কতকগুলো নিয়ম মেনে চলে। যেমন- 

    i) দুটি পূর্ণসংখ্যার গুণ বদ্ধ। 
অর্থাৎ দুইটি পূর্ণসংখ্যা গুণ করলে, গুণফলরূপে আমরা সর্বদা পূর্ণসংখ্যা পাব। 

     ii) দুটি পূর্ণসংখ্যার গুণ বিনিময় নিয়ম মেনে চলে। অর্থাৎ 
a এবং b দুটি পূর্ণসংখ্যা হলে, 
a × b = b × a 

    iii) পূর্ণসংখ্যার গুণ সংযোগ নিয়ম মেনে চলে। অর্থাৎ a, b, c প্রত্যেকে পূর্ণসংখ্যা হলে, 
a × ( b × c ) = ( a × b ) × c 

    iv) আবার পূর্ণসংখ্যার গুণ বিচ্ছেদ নিয়ম মেনে চলে। 
অর্থাৎ a, b, c প্রত্যেকে পূর্ণসংখ্যা হলে, 
a × ( b + c ) = a × b + a × c 
এবং ( a + b ) × c = a × c + b × c 

    শূণ্য যে সকল পূর্ণসংখ্যার থেকে আলাদা, তার ছাপ পূর্ণসংখ্যার গুণের সময়ও দেখতে পাই। যেমন- 
a যে কোনো একটি পূর্ণসংখ্যা হলে, 
a × 0 = 0 = 0 × a 

    পূর্ণসংখ্যার গুণের সময় আরও একটি বিশেষ ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। 

    1 এমন এক পূর্ণসংখ্যা, যা দিয়ে অন্য কোনো পূর্ণসংখ্যাকে গুণ করলেও তার মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন- 
a যে কোনো একটি পূর্ণসংখ্যা হলে, 
a × 1 = a = 1 × a 

    আবার (-1) এমন এক পূর্ণসংখ্যা, যা দিয়ে অন্য কোনো পূর্ণসংখ্যাকে গুণ করলে তার মানের পরিবর্তন না হলেও চিহ্নের পরিবর্তন হয়। যেমন- 
a যে কোনো একটি পূর্ণসংখ্যা হলে, 
a × (-1) = -a = (-1) × a 

    এখন আমরা নিজেরা বাড়িতে বেশ কিছু পূর্ণসংখ্যা নিয়ে, নিজেরা গুণ করে পূর্ণসংখ্যার নিয়মগুলি অনুশীলন করব। পূর্ণসংখ্যার গুণ অনুশীলন করার সময়ে, আমরা বেশ কিছু ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা এবং বেশ কিছু ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা উভয় প্রকার পূর্ণসংখ্যা নিয়েই অনুশীলন করব। 

Tuesday, 7 March 2023

পূর্ণসংখ্যার বিয়োগ

    আগের দিন আমরা পূর্ণসংখ্যার যোগ শিখেছিলাম। আজকে পূর্ণসংখ্যার বিয়োগ শিখব। তবে তার আগে আমরা নতুন একটা ধারণা শিখব। যা আমাদের পূর্ণসংখ্যার বিয়োগ পদ্ধতিকে সহজ করে দেবে। 

    এখানে আমরা বিপরীত পূর্ণসংখ্যার কথা আলোচনা করব। আসলে কোনো পূর্ণসংখ্যার বিপরীত পূর্ণসংখ্যা বলতে প্রদত্ত পূর্ণসংখ্যার সাংখ্যমানের সমান, কিন্তু বিপরীত চিহ্নযুক্ত পূর্ণসংখ্যাটিকে বুঝব। অর্থাৎ 
a একটি পূর্ণসংখ্যা হলে, এর বিপরীত পূর্ণসংখ্যা হবে- 
−|a| 

    আবার সাংখ্যমানের সময় আমরা দেখেছি, 
|x| = x, যখন x > 0, 
     = 0, যখন x = 0, 
     = − x যখন x < 0; 

    তবে আমরা একটা মজার বিষয় দেখব। সমস্ত পূর্ণসংখ্যার কিন্তু বিপরীত পূর্ণসংখ্যার আলাদা অস্তিত্ব নেই। আসলে একটু আগেই আমরা বিপরীত পূর্ণসংখ্যা শিখলাম। আর এখনই যদি বলা হয় এমন কোন্ পূর্ণসংখ্যা আছে যাতে করে তার আলাদা বিপরীত পূর্ণসংখ্যা পাব না। তাহলে অবশ্যই শূণ্যের কথা বলতে হয়। কারণ শূণ্যের আলাদা কোন বিপরীত পূর্ণসংখ্যা নেই। 

    তবে মজার শেষ এখানেই নয়। বিপরীত পূর্ণসংখ্যার বিপরীত, আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। যেমন- 
5 এর বিপরীত পূর্ণসংখ্যা = -5 
আবার -5 এর বিপরীত পূর্ণসংখ্যা = 5 

    আবার আমরা দেখাতে পারি, শূণ্য ছাড়া প্রতিটি পূর্ণসংখ্যার ঠিক নির্দিষ্ট একটি বিপরীত পূর্ণসংখ্যা থাকে। 

    অর্থাৎ আগেরটির সাথে মিলিয়ে আমরা বলতে পারি- 
a যে কোনো একটি পূর্ণসংখ্যা হলে, 
-(-a) = a 

    আবার বিপরীত পূর্ণসংখ্যা কেন গুরুত্বপূর্ণ তা এখনই আমরা জানতে পারবো। একটি পূর্ণসংখ্যা থেকে অপর একটি পূর্ণসংখ্যা বিয়োগ করার সময়, আমরা দ্বিতীয় পূর্ণসংখ্যাটির বিপরীত পূর্ণসংখ্যা প্রথম পূর্ণসংখ্যার সাথে যোগ করব। 

    অর্থাৎ a এবং b দুটি পূর্ণসংখ্যা হলে, 
a - b = a + ( -b ) 

    এইভাবে আমরা যে কোনো পূর্ণসংখ্যা থেকে যে কোনো পূর্ণসংখ্যা বিয়োগ করে বিয়োগফল নির্ণয় করতে পারি। তবে শূণ্যকে নিয়ে এখানেও কতকগুলি আলাদা ঘটনা লক্ষ্য করব। 

    যেমন- i) প্রথমেই বলতে হয়, কোনো একটি পূর্ণসংখ্যা থেকে একই পূর্ণসংখ্যা বিয়োগ করলে, আমরা শূণ্য পাব। অর্থাৎ 
a যে কোনো একটি পূর্ণসংখ্যা হলে, 
a - a = 0 = (a) + (-a) 

    ii) কোন পূর্ণসংখ্যা থেকে শূণ্য বিয়োগ করলে বিয়োগফল রূপে আমরা পূর্ণসংখ্যাটিকেই পাব। অর্থাৎ 
a যে কোনো একটি পূর্ণসংখ্যা হলে, 
a - 0 = a 

    iii) শূণ্য থেকে কোনো পূর্ণসংখ্যা বিয়োগ করলে, বিয়োগফল রূপে আমরা পূর্ণসংখ্যাটির বিপরীত পূর্ণসংখ্যা পাব। অর্থাৎ 
a যে কোনো একটি পূর্ণসংখ্যা হলে, 
0 - a = -a 

    তবে শুধু যে এগুলোই দেখবো তা নয়, স্বাভাবিক সংখ্যার বিয়োগ বদ্ধ নয় দেখেছিলাম। আর এখানে পূর্ণসংখ্যার ক্ষেত্রে একটু অন্যরকম দেখব। যেমন পূর্ণসংখ্যার বিয়োগ বদ্ধ। অর্থাৎ 
একটি পূর্ণসংখ্যা থেকে অপর একটি পূর্ণসংখ্যা বিয়োগ করলে, আমরা সর্বদা বিয়োগফল রূপে একটি পূর্ণসংখ্যা পাব। 

    এবারে আমরা যদি পূর্ণসংখ্যার বিয়োগের সময় বিনিময় নিয়ম পরীক্ষা করতে যাই তাহলে দেখব, 
 a এবং b দুটি আলাদা পূর্ণসংখ্যা হলে, 
a − b ≠ b − a 
বাস্তবে a − b = − ( b − a ) হয়। 

    তাই আমরা বলতে পারি দুটি আলাদা পূর্ণসংখ্যার বিয়োগ বিনিময় নিয়ম মেনে চলে না। 

    আবার পূর্ণসংখ্যার বিয়োগের সময় একই পূর্ণসংখ্যা নিলে আমরা দেখতে পাবো, তখন পূর্ণসংখ্যার বিয়োগ বিনিময় নিয়ম মেনে চলার মত আচরণ করছে। এরূপ হওয়ার কারণ, সেই শূণ্য। এক্ষেত্রে দুদিক থেকেই বিয়োগফল শূণ্য হয়েছে। আর শূণ্যের তো আলাদা বিপরীত সংখ্যা নেই। 

    আবার আমরা যদি একটু খুঁটিয়ে দেখি, তাহলে দেখতে পাবো, আলাদা পূর্ণসংখ্যার বিয়োগ সংযোগ নিয়ম মেনে চলে না। অর্থাৎ 
a, b, c তিনটি আলাদা পূর্ণসংখ্যা হলে, 
a − ( b − c ) ≠ ( a − b ) − c 
বাস্তবে a − ( b − c ) = ( a − b ) + c  হয়। 

    এখানেও c = 0 হলে, আমরা পূর্ণসংখ্যার বিয়োগকে অন্য আচরণ করে সংযোগ নিয়ম মেনে চলতে দেখব। 

    আমরা নিজেরা বাড়িতে কিছু আলাদা পূর্ণসংখ্যা নিয়ে বিনিময় নিয়ম, সংযোগ নিয়ম অনুশীলন করতে পারি। প্রতিক্ষেত্রে নিজেরাই নিজের উত্তরকে সমর্থন করার মতো রসদ পাবে। আর তাতে করে নিজের উপর আস্থা বাড়বে। আসলে নিজে নিজেই দেখতে পাবে, নিজেই আগের থেকে বেশী কিছু পারছো। আর আমরা যদি প্রতিদিন একটু একটু করে আমাদের জানার পরিমাণ বাড়াতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

Sunday, 5 March 2023

পূর্ণসংখ্যার যোগ

    আগেই আমরা স্বাভাবিক সংখ্যার যোগ শিখেছি। আজকে আমরা একটি পূর্ণসংখ্যার সাথে একটি পূর্ণসংখ্যা কিভাবে যোগ করা হয়, তা শিখব। 

    i) যদি পূর্ণসংখ্যা দুটি উভয়েই ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা হয়, তাহলে স্বাভাবিক সংখ্যার যোগের মতোই পূর্ণসংখ্যা দুটি যোগ করে, যোগফল নির্ণয় করতে পারি। যেমন- 
2 + 3 = 5 

    ii) যদি একটি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাথে শূণ্য যোগ করা হয়, তাহলে যোগফলরূপে আমরা ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাটিই পাব। যেমন- 
2 + 0 = 2; 
5 + 0 = 5; 
10 + 0 = 10; 
    অর্থাৎ a একটি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা হলে- 
a + 0 = a   হয়। 

    iii) যদি একটি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাথে একটি ঋনাত্মক পূর্ণসংখ্যা যোগ করা হয়, তখন- 
    a) যদি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা ও ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাংখ্যমান হয়, তবে যোগফল শূণ্য হয়। যেমন- 
(5) + (-5) = 0 
    অর্থাৎ a কোনো ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা এবং (-a) ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা হলে- 
(a) + (-a) = 0 

    b) ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাংখ্যমান ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাংখ্যমানের থেকে বড় হলে, ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাংখ্যমান থেকে ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার  সাংখ্যমানের বিয়োগফলই নির্ণেয় যোগফলরূপে বিবেচিত হয়। যেমন- 
(5) + (-2) = 3 = ( 5 - 2 ) 

    c) ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাংখ্যমান ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাংখ্যমানের থেকে ছোট হলে, ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাংখ্যমান থেকে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাংখ্যমান বিয়োগ করে প্রাপ্ত বিয়োগফলের আগের ঋণাত্মক চিহ্ন জুড়ে পূর্ণসংখ্যা দুটির যোগফল লেখা হয়। যেমন- 
(5) + (-7) = -2 = - ( 7 - 5 ) 

    iv) এবারে আমরা দেখব, কোনো যোগ প্রক্রিয়ার প্রথম পূর্ণসংখ্যাটি শূণ্য হলে, পূর্ণসংখ্যার যোগ কিরকম আচরণ করে। 

    a যে কোনো একটি পূর্ণসংখ্যা হলে- 
0 + a = a  হয়। 

    v) এবারে আমরা দেখব একটি ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাথে অন্য একটি পূর্ণসংখ্যার যোগ কিভাবে করতে হয়। এখানে আমরা নিজের পদ্ধতি অনুসরণ করবো। 

    a) ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাথে একটি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার যোগের সময় আগে জানা, ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাথে ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার যোগের নিয়ম মেনে চলবো। অর্থাৎ- 
( -7 ) + ( 11 ) = 4 = ( 11 - 7 ) 
( -7 ) + ( 5 ) = -2 = - ( 7 - 5 ) 

    b) ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাথে শূণ্য যোগ করলে যোগফলরূপে আমরা ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যাটিকেই পাব। অর্থাৎ 
    (-a) যে কোনো একটি ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা হলে, 
(-a) + 0 = (-a) 

    c) এবার একটি ঋনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সাথে অন্য একটি ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা যোগ করার সময় আমরা ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা দুটির সাংখ্যমান যোগ করে এবং ঋণাত্মক চিহ্ন যোগ করে যোগফল নির্ণয় করি। যেমন- 

( -5 ) + ( -6 ) = -11 = - ( 5 + 6 ) 

    অর্থাৎ উপরের আলোচনা থেকে এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছি সর্বদাই শূণ্যের জন্য আলাদা নিয়ম শিখতে হয়েছে। 

    তবে যাই হোক না কেন পূর্ণসংখ্যার যোগ এখন শেখা হয়ে গেছে। বাড়িতে কয়েকটি আলাদা আলাদা পূর্ণসংখ্যা নিয়ে যোগ নির্ণয় করে দেখতেও পারো। 

    বেশ কয়েকটি অনুশীলন হয়ে গেলে আমরা দেখতে পাবো পূর্ণসংখ্যার যোগ বদ্ধ। অর্থাৎ 

    একটি পূর্ণসংখ্যার সাথে আর একটি পূর্ণসংখ্যা যোগ করে আমরা সর্বদা একটি পূর্ণসংখ্যা পাই। যেমন- 
10 + 5 = 15 
এখানে 10 পূর্ণসংখ্যার সাথে আর একটি পূর্ণসংখ্যা 5 যোগ করে যোগফলরূপে আর একটি পূর্ণসংখ্যা 15 পেয়েছি। 

    আবার আমরা দেখেছি পূর্ণসংখ্যার যোগ বিনিময় নিয়ম মেনে চলে। অর্থাৎ 
    a এবং b দুটি পূর্ণ সংখ্যা হলে- 
a + b = b + a  হয়। 

    আবার আমরা এও দেখেছি যে, পূর্ণসংখ্যার যোগ সংযোগ নিয়ম মেনে চলে। অর্থাৎ 
    a, b, c যে কোনো পূর্ণসংখ্যা হলে- 
a + ( b + c ) = ( a + b ) + c  হয়। 

পূর্ণসংখ্যা

    স্বাভাবিক সংখ্যার বিয়োগ করার সময় আমরা দেখেছিলাম, একটি বড় স্বাভাবিক সংখ্যা থেকে একটি ছোট স্বাভাবিক সংখ্যা বিয়োগ করে, বিয়োগফল রূপে আমরা একটি স্বাভাবিক সংখ্যা পেয়েছিলাম। কিন্তু যখন একটি স্বাভাবিক সংখ্যা থেকে একই স্বাভাবিক সংখ্যা বিয়োগ করি, তখন বিয়োগফল রূপে শূন্য পেয়েছিলাম। যা কোনো স্বাভাবিক সংখ্যার মধ্যে পড়ে না। আবার একটি ছোট স্বাভাবিক সংখ্যা থেকে বড় স্বাভাবিক সংখ্যা বিয়োগ করে আমরা ঋনাত্মক সংখ্যা পেয়েছি। যেগুলিও স্বাভাবিক সংখ্যার মধ্যে পড়ে না। 

    তাই আমরা আমাদের জানা সংখ্যা তালিকার মধ্যে শুধুমাত্র স্বাভাবিক সংখ্যা রাখলে, কিছুটা ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। এই ঘাটতি দূর করার জন্য আমরা নতুন এক প্রকার সংখ্যার সেট তৈরী করার কথা ভাবতে পারি। যেখানে আমরা অবশ্যই সবকটি স্বাভাবিক সংখ্যাকে রাখবো, শূন্যকে রাখবো এবং সবকটি স্বাভাবিক সংখ্যার আগে ঋণাত্মক চিহ্ন দিয়ে যে সব ঋণাত্মক সংখ্যা পাওয়া যায়, তাদের রাখবো। অর্থাৎ 
{ 1, 2, 3, 4, 5, 6, .........., 0, -1, -2, -3, -4, -5, -6, .......... } 
এই সেটটিকে আমরা পূর্ণ সংখ্যার সেট বলবো। 

     আর পূর্ণসংখ্যার সেট যে উপাদানগুলি নিয়ে গঠিত, তাদের পূর্ণসংখ্যা বলে। 

    সাধারণত পূর্ণসংখ্যার সেটকে I অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। অর্থাৎ 

I = { 1, 2, 3, 4, 5, 6, .........., 0, -1, -2, -3, -4, -5, -6, .......... } 

    নতুন এই পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে আমরা অনেকগুলি ছোট ছোট সাবসেট তৈরী করতে পারি। যেমন- 

    i) পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে শুধুমাত্র ধনাত্মক সংখ্যাগুলো নিয়ে যদি আমরা একটা নতুন সেট তৈরীর কথা ভাবি তাহলে পাবো- 
{ 1, 2, 3, 4, 5, 6, .......... } 
এই সেটটিকে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সেট বলে। এবং এই সেটের উপাদানগুলিকে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা বলে। নতুন তৈরী হওয়া এই সেটটি আসলে আগে থেকে জানা স্বাভাবিক সংখ্যা সেটের সাথে একই সেট হয়ে গেছে। 

    ii) পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে শুধুমাত্র ঋনাত্মক সংখ্যা গুলি নিয়ে যদি আমরা নতুন একটি সেট তৈরীর কথা ভাবি তাহলে পাবো- 
{ -1, -2, -3, -4, -5, -6, .......... } 
এই সেটটিকে ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার সেট বলে। এবং ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার সেটের প্রতিটি উপাদানকে ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা বলে। 

    iii) পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে শুধুমাত্র ঋনাত্মক পূর্ণসংখ্যা গুলিকে বাদ দিলে আমরা নতুন আরেকটি সেট পাই। যেমন- 
{ 0, 1, 2, 3, 4, 5, 6, .......... } 
এই সেটটিকে অ-ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার (Non negative integer) সেট বলে। 

    iv) আবার পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে শুধুমাত্র ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা গুলিকে বাদ দিলে নতুন যে সেটটি পাই তা নিম্নরূপ- 
{ 0, -1, -2, -3, -4, -5, -6, .......... } 
এই সেটটিকে অ-ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার (Non positive integer) সেট বলে। 

    v) এবারে পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে পূর্ণসংখ্যা নিয়ে আমরা একটি অশূণ্য সংখ্যার নতুন সেট তৈরী করতে পারি। যেমন- 
{ 1, 2, 3, 4, 5, 6, .........., -1, -2, -3, -4, -5, -6, .......... } 
এই সেটটিকে অশূণ্য পূর্ণসংখ্যার (Non zero integer) সেট বলে। 

    vi) এখান থেকেই শুধুমাত্র শূন্য সংখ্যাটিকে নিয়ে আমরা আলাদা করে ভাবতে পারি। সেখান থেকেই বোধ হয় { 0 } সেটটির উৎপত্তি। বস্তুতঃ, বাস্তবে আমরা খুব ভালো করেই জানি, শূন্য সংখ্যাটি অন্য সকল পূর্ণসংখ্যার থেকে নানা দিক থেকে আলাদা। তাই বোধ হয় শূণ্যকে একটু আলাদা চোখে সর্বদা দেখতে হয়। 

    একটু যেন কেমন কেমন লাগছে! আসলে আমি যখন ছোট ছিলাম এবং বাবার থেকে শূণ্যকে আলাদা করে দেখার কথা শুনেছিলাম, আমারও তখন একই প্রশ্ন সামনে এসেছিল। এত সংখ্যা থাকতে কেনই বা শূন্যকে আলাদা করে গুরুত্ব দেব। 

    বাবাকে প্রশ্নটা করেও ফেলেছিলাম। তখন বাবা শিখিয়েছিলেন। শূন্য বাদে বাকি সবগুলোকে তো তুমি দেখতে পাও। তাহলে তাদের আর ভয় কি? কিন্তু তোমার কাছে যা নেই, যাকে দেখতে পাও না, সহজে বুঝতে পারাও যায় না, তাকে তো একটু বেশি গুরুত্ব দিতেই হয়। 

    আসলে বাবার বলা সেই গল্পটি আগামীকাল বলব। আর তা থেকেই শূন্য কেন অন্য পূর্ণসংখ্যা থেকে আলাদা, তা জানতে পারবে। 

    এখানে আজকেই আরেকটু জানা প্রয়োজন। কোনো পূর্ণসংখ্যার চিহ্ন বাদ দিলে যে মানটি পড়ে থাকে, তাকে পূর্ণসংখ্যাটির সাংখ্যমান বলে। যেমন- 
5 এর সাংখ্যমান = 5 
আবার -2 এর সাংখ্যমান = 2 

জোড় সংখ্যা ও বিজোড় সংখ্যা

    আমরা যখন সকল স্বাভাবিক সংখ্যাকে একত্রিকরণ শিখে ফেলেছি, তখন থেকে বিভিন্ন স্বাভাবিক সংখ্যার মধ্যে মিল খোঁজার চেষ্টা করেছি। এই মিল খুঁজতে গিয়ে যাদের মধ্যে কোনো একটি ধর্মের মিল পেয়েছি, তাদের একত্রিকরণ শুরু করেছি। 

    এখানে আমরা দেখেছি, কতকগুলি স্বাভাবিক সংখ্যা রয়েছে যারা দুই দ্বারা বিভাজ্য। আবার কতকগুলি দুই দ্বারা বিভাজ্য নয়। 

    যে সব স্বাভাবিক সংখ্যাগুলি দুই দ্বারা বিভাজ্য, তাদের জোড় সংখ্যা বলে। যেমন- 2, 4, 6, 8, 10, 12, 14, 16, 18, 20 ইত্যাদি। 

    আবার যে সব স্বাভাবিক সংখ্যা দুই দ্বারা বিভাজ্য নয়, তাদের বিজোড় সংখ্যা বলে। যেমন- 1, 3, 5, 7, 9, 11, 13, 15, 17, 19, 21 ইত্যাদি। 

    এখানে আমরা আর একটা বিশেষ ঘটনা লক্ষ্য করতে পারি। 

    2 ছাড়া সকল জোড় সংখ্যা যৌগিক সংখ্যা। 

    অর্থাৎ একমাত্র জোড় সংখ্যা যা মৌলিক, তা হল 2; 

    কিন্তু 9, 15, 21, 25, 27, 33, 35 প্রভৃতি স্বাভাবিক সংখ্যা বিজোড় সংখ্যা হলেও যৌগিক সংখ্যা। 

    আবার 3, 5, 7, 11, 13, 17, 19, 23 প্রভৃতি স্বাভাবিক সংখ্যা এক দিকে যেমন বিজোড় সংখ্যা, তেমনি প্রত্যেকেই মৌলিক সংখ্যা। 

    তাই আমরা বলতে পারি, বিজোড় সংখ্যা, মৌলিক ও যৌগিক দুইই হতে পারে। 

    এখানে জোড় ও বিজোড় সংখ্যাকে আমরা অন্যভাবেও সংজ্ঞায়িত করতে পারি। 

    যে সব স্বাভাবিক সংখ্যাকে 2 দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায়, তাদের জোড় সংখ্যা বলে। 

    যে সব স্বাভাবিক সংখ্যাকে 2 দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায় না, 1 ভাগশেষ থাকে, তাদের বিজোড় সংখ্যা বলে। 

    আবার অন্য ভাবে দেখলে, জোড় ও বিজোড় সংখ্যাকে অন্যভাবেও সংজ্ঞায়িত করা যায়। 

    আবার অন্যভাবে দেখলে, জোড় ও বিজোড় সংখ্যাকে অন্যভাবেও সংজ্ঞায়িত করা যায়। 

    যে স্বাভাবিক সংখ্যাকে 2n আকারে প্রকাশ করা যায়, যেখানে n হল যে কোন স্বাভাবিক সংখ্যা, তাকে জোড় সংখ্যা বা যুগ্ম সংখ্যা বলে। যেমন- 
n = 1 হলে আমরা পাই 2n = 2, যা একটি জোড় সংখ্যা। 
n = 2 হলে আমরা পাই 2n = 4, যা একটি জোড় সংখ্যা। 
n = 3 হলে আমরা পাই 2n = 6, যা একটি জোড় সংখ্যা। 
n = 4 হলে আমরা পাই 2n = 8, যা একটি জোড় সংখ্যা। 
n = n হলে আমরা পাই 2n, যা একটি জোড় সংখ্যা। 

    যে স্বাভাবিক সংখ্যাকে 2n + 1 আকারে প্রকাশ করা যায়, যেখানে, n হল যে কোন স্বাভাবিক সংখ্যা, তাকে বিজোড় সংখ্যা বা অযুগ্ম সংখ্যা বলে। যেমন- 
n = 1 হলে আমরা পাই 2n+1 = 3, যা একটি বিজোড় সংখ্যা। 
n = 2 হলে আমরা পাই 2n+1 = 5, যা একটি বিজোড় সংখ্যা। 
n = 3 হলে আমরা পাই 2n+1 = 7, যা একটি বিজোড় সংখ্যা। 
n = 4 হলে আমরা পাই 2n+1 = 9, যা একটি বিজোড় সংখ্যা। 
n = 5 হলে আমরা পাই 2n+1 = 11, যা একটি বিজোড় সংখ্যা। 
n = n হলে আমরা পাই 2n+1, যা একটি বিজোড় সংখ্যা। 

    আবার একটু অন্য ভাবে দেখলে, অবশ্যই দেখতে পাবো- 

    যে সব স্বাভাবিক সংখ্যাগুলির একক স্থানীয় অঙ্ক 0, 2, 4, 6, 8 এর মধ্যে একটি, সেই স্বাভাবিক সংখ্যাটি জোড় সংখ্যা হয়। 

    এবং যে সব স্বাভাবিক সংখ্যাগুলির একক স্থানীয় অঙ্ক 1, 3, 5, 7, 9 এর মধ্যে একটি, সেই স্বাভাবিক সংখ্যাটি বিজোড় সংখ্যা হয়।