Sunday, 5 March 2023

পূর্ণসংখ্যা

    স্বাভাবিক সংখ্যার বিয়োগ করার সময় আমরা দেখেছিলাম, একটি বড় স্বাভাবিক সংখ্যা থেকে একটি ছোট স্বাভাবিক সংখ্যা বিয়োগ করে, বিয়োগফল রূপে আমরা একটি স্বাভাবিক সংখ্যা পেয়েছিলাম। কিন্তু যখন একটি স্বাভাবিক সংখ্যা থেকে একই স্বাভাবিক সংখ্যা বিয়োগ করি, তখন বিয়োগফল রূপে শূন্য পেয়েছিলাম। যা কোনো স্বাভাবিক সংখ্যার মধ্যে পড়ে না। আবার একটি ছোট স্বাভাবিক সংখ্যা থেকে বড় স্বাভাবিক সংখ্যা বিয়োগ করে আমরা ঋনাত্মক সংখ্যা পেয়েছি। যেগুলিও স্বাভাবিক সংখ্যার মধ্যে পড়ে না। 

    তাই আমরা আমাদের জানা সংখ্যা তালিকার মধ্যে শুধুমাত্র স্বাভাবিক সংখ্যা রাখলে, কিছুটা ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। এই ঘাটতি দূর করার জন্য আমরা নতুন এক প্রকার সংখ্যার সেট তৈরী করার কথা ভাবতে পারি। যেখানে আমরা অবশ্যই সবকটি স্বাভাবিক সংখ্যাকে রাখবো, শূন্যকে রাখবো এবং সবকটি স্বাভাবিক সংখ্যার আগে ঋণাত্মক চিহ্ন দিয়ে যে সব ঋণাত্মক সংখ্যা পাওয়া যায়, তাদের রাখবো। অর্থাৎ 
{ 1, 2, 3, 4, 5, 6, .........., 0, -1, -2, -3, -4, -5, -6, .......... } 
এই সেটটিকে আমরা পূর্ণ সংখ্যার সেট বলবো। 

     আর পূর্ণসংখ্যার সেট যে উপাদানগুলি নিয়ে গঠিত, তাদের পূর্ণসংখ্যা বলে। 

    সাধারণত পূর্ণসংখ্যার সেটকে I অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। অর্থাৎ 

I = { 1, 2, 3, 4, 5, 6, .........., 0, -1, -2, -3, -4, -5, -6, .......... } 

    নতুন এই পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে আমরা অনেকগুলি ছোট ছোট সাবসেট তৈরী করতে পারি। যেমন- 

    i) পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে শুধুমাত্র ধনাত্মক সংখ্যাগুলো নিয়ে যদি আমরা একটা নতুন সেট তৈরীর কথা ভাবি তাহলে পাবো- 
{ 1, 2, 3, 4, 5, 6, .......... } 
এই সেটটিকে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার সেট বলে। এবং এই সেটের উপাদানগুলিকে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা বলে। নতুন তৈরী হওয়া এই সেটটি আসলে আগে থেকে জানা স্বাভাবিক সংখ্যা সেটের সাথে একই সেট হয়ে গেছে। 

    ii) পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে শুধুমাত্র ঋনাত্মক সংখ্যা গুলি নিয়ে যদি আমরা নতুন একটি সেট তৈরীর কথা ভাবি তাহলে পাবো- 
{ -1, -2, -3, -4, -5, -6, .......... } 
এই সেটটিকে ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার সেট বলে। এবং ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার সেটের প্রতিটি উপাদানকে ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যা বলে। 

    iii) পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে শুধুমাত্র ঋনাত্মক পূর্ণসংখ্যা গুলিকে বাদ দিলে আমরা নতুন আরেকটি সেট পাই। যেমন- 
{ 0, 1, 2, 3, 4, 5, 6, .......... } 
এই সেটটিকে অ-ঋণাত্মক পূর্ণসংখ্যার (Non negative integer) সেট বলে। 

    iv) আবার পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে শুধুমাত্র ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা গুলিকে বাদ দিলে নতুন যে সেটটি পাই তা নিম্নরূপ- 
{ 0, -1, -2, -3, -4, -5, -6, .......... } 
এই সেটটিকে অ-ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যার (Non positive integer) সেট বলে। 

    v) এবারে পূর্ণসংখ্যার সেট থেকে পূর্ণসংখ্যা নিয়ে আমরা একটি অশূণ্য সংখ্যার নতুন সেট তৈরী করতে পারি। যেমন- 
{ 1, 2, 3, 4, 5, 6, .........., -1, -2, -3, -4, -5, -6, .......... } 
এই সেটটিকে অশূণ্য পূর্ণসংখ্যার (Non zero integer) সেট বলে। 

    vi) এখান থেকেই শুধুমাত্র শূন্য সংখ্যাটিকে নিয়ে আমরা আলাদা করে ভাবতে পারি। সেখান থেকেই বোধ হয় { 0 } সেটটির উৎপত্তি। বস্তুতঃ, বাস্তবে আমরা খুব ভালো করেই জানি, শূন্য সংখ্যাটি অন্য সকল পূর্ণসংখ্যার থেকে নানা দিক থেকে আলাদা। তাই বোধ হয় শূণ্যকে একটু আলাদা চোখে সর্বদা দেখতে হয়। 

    একটু যেন কেমন কেমন লাগছে! আসলে আমি যখন ছোট ছিলাম এবং বাবার থেকে শূণ্যকে আলাদা করে দেখার কথা শুনেছিলাম, আমারও তখন একই প্রশ্ন সামনে এসেছিল। এত সংখ্যা থাকতে কেনই বা শূন্যকে আলাদা করে গুরুত্ব দেব। 

    বাবাকে প্রশ্নটা করেও ফেলেছিলাম। তখন বাবা শিখিয়েছিলেন। শূন্য বাদে বাকি সবগুলোকে তো তুমি দেখতে পাও। তাহলে তাদের আর ভয় কি? কিন্তু তোমার কাছে যা নেই, যাকে দেখতে পাও না, সহজে বুঝতে পারাও যায় না, তাকে তো একটু বেশি গুরুত্ব দিতেই হয়। 

    আসলে বাবার বলা সেই গল্পটি আগামীকাল বলব। আর তা থেকেই শূন্য কেন অন্য পূর্ণসংখ্যা থেকে আলাদা, তা জানতে পারবে। 

    এখানে আজকেই আরেকটু জানা প্রয়োজন। কোনো পূর্ণসংখ্যার চিহ্ন বাদ দিলে যে মানটি পড়ে থাকে, তাকে পূর্ণসংখ্যাটির সাংখ্যমান বলে। যেমন- 
5 এর সাংখ্যমান = 5 
আবার -2 এর সাংখ্যমান = 2 

No comments:

Post a Comment