Monday, 10 January 2022

চলো, অঙ্কের ভয় কাটাই

    আমি কিছুদিন আগেও তো স্কুলের বাইরে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতাম। তা কি এমন ঘটনা ঘটল যে টিউশন একেবারেই ছেড়ে দিলাম। এই প্রশ্নটির মুখোমুখি প্রায়ই হতে হয়। আর প্রত্যেকবারের মতো "আমি টিচার তো!" বলে পাশ কাটিয়ে গেলেও নতুন বছরে সকলকে জানানোর উদ্দেশ্যে আবার লেখা শুরু করছি। নিজের সাথে নিজের, একটা চ্যালেঞ্জ এটা। আমাকে ঠিক এক বছর সময়েই শেষ করতে হবে এবং যাকে জানালাম, তাকেও শেখাতে পারলাম জেনে শেষ করতে হবে। 

    আর এখানেই যত সমস্যা! "আমি টিচার তো!" ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই একটি কথাই বারবার চলে আসে। আমি যদি টিচার হই, তাহলে শেখাতে পারা উচিত। আমি অনেক বেশি জানতে পারি। তার মানে কিন্তু এই নয় যে আমি অনেক কিছু জানাতে পারি। জানা তো শুধুমাত্র নিজের উপর প্রযোজ্য। সবকিছুই প্রকৃতিতে রয়েছে। তুমি শুধু নিজে যা জানতে চাও তা জেনে নাও। জানার জন্য অনেক কিছু সহজ উপকরন হাতের কাছেই পাওয়া যায়। আবার অতীতের অনেক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যারা আগেই ঐ সব ঘটনা জানতে চেয়েছেন এবং জানার পর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জানার জন্য লিখে রেখে গেছেন। তাদের পথ অনুসরন করে খুব সহজেই তো যে কোন ঘটনা জানা যায়। কিন্তু নতুন করে ঘটা কোন ঘটনাকে জানাবো কিভাবে? 

    সমস্যার শুরু যে এখানে তাও বলা যায় না। আমরা যদি ভাবতে শুরু করি, আমার সাথে ঘটে চলা প্রতিটি ঘটনা মনে রাখব। কিন্তু তাও তো সম্ভব নয়! আমাদের মাথা তো আর অত ভালো না যে সবকিছু মাথার মধ্যেই রয়ে যাবে। এই যেমন দিন দশেক আগে মঙ্গলবার দুপুর বেলায় ঠিক কি কি দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম, আজ হয়তো ঠিক বলতে পারব না। আসলে পরিবেশ থেকে যা কিছু আমরা আহরণ করি, প্রাকৃতিক নিয়মেই তার বেশিরভাগ অংশ সহজে শেখার মত সহজেই ভুলে যাই। আর এটাই স্বাভাবিক। আসলে এটা ভুলে যাওয়ার মধ্যেই যত সমস্যা। 

    আমরা শিখেছি এটা স্বীকার করতে আমরা ভয় পাই। তার থেকে এটা বলা ভালো আমরা জেনেছি। এখানে কোনো দায় নেই। আমরা যা জেনেছি, কোন কারনে এখন তা ভুলে গেছি। ঠিক আছে, আবার জেনে নিচ্ছি। কত সহজেই মিটে যায়! কিন্তু শিখেছি বলার পর, ভুলে গেছি, এটা বলার জায়গা থাকে না। তাই শেখার সময়ও আমরা সকলেই জানার চেষ্টা করি। এটা ধরে নিই যে জানা হয়ে গেলেই হয়তো শেখা হয়ে যাবে। 

    আমাদের মনের মধ্যে সর্বদা এটা কাজ করে যে, প্রকৃতিতে অনেক কিছু রয়েছে যা আমরা জানি না। আর এই না জানা থেকেই মনের মধ্যে ভয় বাসা বাঁধতে শুরু করে। তাহলে ভয় দূর করতে হলে জেনে নিলেই তো পাঠ চুকে যায়। কিন্তু আমরা যে প্রচন্ড রকমের কুঁড়ে! তাও আবার স্বীকার করতেও চাই না যে আমরা কুঁড়ে! আর এখানেই শেখার প্রয়োজন দেখা দেয়। 

    কত কিছুই তো প্রকৃতি থেকে আমরা শিখে নিই। আর একবার শিখে নিলে আমরা কোনদিন কিন্তু সাঁতার কাটতে ভুলে যায় না। আবার কোন একটা সিনেমা একবার দেখেই প্রায় পুরোটা মনে রাখতে পারি। তখন কি করে এটা মেনে নেবো যে, যাকে আমি শেখাতে চাই সে কোন কিছু মনে রাখতে পারে না! তাহলে আমার থেকে শেখার পর, শিখেছি এটা বলা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়ে। 

    আসলে এটাই হলো চ্যালেঞ্জ। আমি যখন খুশি, শেখা শুরু করতে পারি। কিন্তু সঠিক লক্ষ্য না থাকলে, শেখা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত বোরিং কাজ আর কিছু নেই। যেমন আমি ছোটবেলায় যখন অনেকবার পড়ে যাওয়ার পর হাটতে শিখি, তারপর থেকে আজ পর্যন্ত অভ্যাস করতে করতে আজকে কনফিডেন্টের সাথে, চোখ বুজেও হাঁটতে পারি। কিন্তু শিখে যাওয়ার পর আর শেখা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি। আমি জানি কেউ কেউ আছেন, যারা একটা তারের উপর দিয়েও হেঁটে চলে যেতে পারেন। আমার লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র হাঁটা শেখা। তাই ওই পর্যন্ত শিখেই আমাকে আটকে যেতে হয়েছে। তাই শেখা শুরু করার আগেই আমাদের লক্ষ্য ঠিক করে নেয়া জরুরি। 

    প্রকৃতি থেকে আমরা ঠিক কি জানতে চাই? এটাই ঠিক করে উঠতে পারি না। আসলে ছোট থেকে আমরা যখন লেখাপড়ার মাধ্যমে শিখতে যাই, তখন থেকেই আমাদের শেখাটা নম্বরের মাপকাটিতে বিচার্য হয়ে এসেছে। আর কিছু বিষয়ের সঙ্গে একটা বিষয় অবশ্যই থেকে গিয়েছে, যাতে আমি সবকিছু ঠিক লিখে এসেও, রেজাল্টের সময়ে শুধুমাত্র ওই বিশেষ একটি বিষয়ের জন্যই বাড়িতে সবার কাছ থেকে বকুনি খেতে হয়েছে। 

    এ যেন প্রতিবার পরীক্ষার সময়ে রীতিমতো অভ্যাসের ব্যাপার! সবকিছুর পরেও আমার থেকে ভালো কেউ একজন থেকে যায়! আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, যে স্কুলে আমাদের মধ্যে ফার্স্ট হয়, এমন একটি বিষয় রয়েছে, যাতে আমি তার থেকেও বেশী পেয়েছি। আর প্রতিবারই দেখেছি স্যার যতই শেখার কথা বলুক না কেন, নম্বরই শেষ কথা বলে! 

    আর এখানেই যত সমস্যা। আমরা শিখবো না বেশী নম্বর পাব - কোনটিকে বেছে নেব। যদি শিখতে যাই, তাহলে ঠিক মতো শেখা হয়ে ওঠে না। আর নম্বরও কমে যায়। তার চেয়ে বরং বেশী নম্বর পাওয়ার চেষ্টা করা ভালো। এতে নম্বরটাও বারে, আর কিছুটা শেখাও হয়ে যায়। এই ধারণাটাকে প্রথমে আমাদের পাল্টাতে হবে। 

    যতই অসুবিধা হোক, আমাদের এটা স্বীকার করতেই হবে, সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে আমরা সবাই পারি। মাঝে মাঝে অসুবিধা হয়। তখন আরো সহজে সমাধান করার উপায় শিখতে হয়। আর এখানেই রয়েছে চ্যালেঞ্জ। আমরা খুব সহজে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারি। আবার সহজেই এড়িয়ে যেতে পারি। আমাদের নিজেকেই ঠিক করতে হবে, আমরা "নিজের সাথে নিজের" এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে রাজি আছে কিনা। 

    আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, একজন অন্তত রয়েছে, যে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছে। আর সে যে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল তা জানানোর জন্য আমাকে srijanservice.2018@gmail.com এ মেইল করতে পারো। 

    কিন্তু অনেকের কাছেই এখনও পরিষ্কার নয়, এই নিজের সাথে নিজের চ্যালেঞ্জ আসলে কি। বা কত দিনের চ্যালেঞ্জ। অথবা চ্যালেঞ্জ জিতলেই বা  আমরা কী পাব? 

    আমরা যারা সবকিছুকে বিচার করার মাপকাঠিতে সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে ডুবে থাকি, তারা জানি পরীক্ষার পর নম্বরই শেষ কথা বলে। তাদের বলে রাখা ভালো যে এই চ্যালেঞ্জে জেতার পর বেশী নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। 

    আর চ্যালেঞ্জটি হল, যদি আমি আজকে কোন কিছু শিখি, তাহলে আজকেই সকলের কাছে জানাতে পারবো, আজকে কি শিখলাম। এবং সকলকে জানিয়ে বিরক্ত না করে, আমাকে মেইলে পাঠিয়ে দিলেই আমি জানতে পারবো ঠিক কাকে কাকে আমি আজকে শিখাতে পারলাম। আমি প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়ে যাবো। যারা শিখতে পারলে না, তারাও আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারো। তবে সেখানে একটি শর্ত আছে। আর তা হলো নিজের সাথে নিজের চ্যালেঞ্জ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। 





★★আজকে যা শিখলাম★★
        শেখা, স্বীকার করতে শিখবো। 


No comments:

Post a Comment