আমি যদি এখন প্রশ্ন করি, আজকে ঠিক কে কে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এসেছো বা আজকে সাইকেল চালিয়েছো বা বাজার করেছ, তাহলে প্রায় সকলেই উত্তরে হ্যাঁ বলবে।
কি, তাই তো! নাকি অন্য উত্তর, আর সেটি অবশ্যই না হবে। যাদের না হয়েছে, তারা গত এক সপ্তাহ নিয়ে হিসাব করো, তাহলেই হ্যাঁ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি জিজ্ঞাসা করি কে কে আছো, যারা গণিতের সবকিছু সহজে সমাধান করতে পারো, তাহলে বোধ হয় অনেকেরই হ্যাঁ উত্তর আর থাকবে না।
আসলে কি হয় জানো, গণিতের কোন সমস্যা যখন আমরা ঠিক বুঝতে পারি না, তখনই আমি জানি না- এর পরিবর্তে, আমি পারবো না, বলে বসি। আর মাথার মধ্যে এটা আটকে যায় যে, গণিতের থেকে শক্ত বিষয় বোধ হয় আর কিছু নেই।
আমি এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমরা যারা গণিতকে বুঝতে পারি না বলি, তারা প্রত্যেকেই আসলে মিথ্যা কথা বলি। একটু উদাহরণ দিয়ে বললে সহজে বুঝতে পারবে। আমরা যারা আজকে বা গত এক সপ্তাহে সিঁড়ি দিয়ে উঠেছি, তাদের কেউই হয়তো পেন খাতা নিয়ে ক্যালকুলেশন করিনি, প্রতিবার স্টেপ ফেলার সময়ে আমার পা ঠিক কত ইঞ্চি উপরে তুলতে হবে। তা না করেই একবারও হোঁচট খেয়ে না পড়ে, উপরে এসে পৌঁছেচি। আমরা স্বীকার না করলেও এখন বেশ বুঝতে পারছি, আমাদের ব্রেন কিন্তু অঙ্কে বেশ পটু!
কিমবা সাইকেল চালানোর সময়, আমরা কেউই অঙ্ক কষে গতিবেগ হিসাব করে সাইকেল চালাই না। কাউকে ওভারটেক করার সময়ে বা কাউকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময়ে, কখনও গতি বাড়াই বা কখনও ব্রেক কষে গতি কমাই। খাতা পেন নিয়ে দূরত্ব, সময়, গতিবেগ ক্যালকুলেশন না করলেও কাউকে ধাক্কা দিয়েছি বা পড়ে গেছি বলে তো মনে হয় না। তাহলে এক্ষেত্রেও আমাদের ব্রেন কিন্তু অঙ্ক এতটাই ভাল বোঝে যে প্রতিনিয়ত আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। কিন্তু এটাকে মুখে স্বীকার করে ফেললেই সমস্যা!
তখন আর এটা বলার জায়গা থাকে না যে, "আমি পারব না!" হতে পারে, আমি জানি না। ঠিক আছে, জানো না যখন, তখন জেনে নাও। তারপর সমস্যাটিকে নিজেই সমাধান করো। আর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এখানেই বড় বেশী জড়তা। আমরা কখনোই ব্রেনের উপর চাপ দিতে চাই না। আগে জানা ছিল কিনা ভালোভাবে না ভেবেই, আমি জানি না, ভেবে বসি। আর তারপর তো স্যার বা ম্যাডাম করে দিলেই তবে অঙ্কটি হয়।
এখানে আমার একটা প্রসঙ্গ খুব মনে পড়ছে। আমি যে স্কুলে পড়তাম, সেই স্কুলেরই ক্লাস নাইনের একজন ছাত্র একদিন আমাকে প্রশ্ন করে, অঙ্কে কি করে পাশ করা যায় বলতে পারো? আমি তো সেই ফাইভ থেকে এই নাইন পর্যন্ত, হাফ ইয়ারলি, অ্যানুয়াল, দুটোতেই পাঁচ করে নম্বর পেয়ে আসছি। অন্য সব বিষয়গুলোতে ভালো নম্বরের জন্য হয়তো টেনে তুলে দেবে। কিন্তু মাধ্যমিকে তো অঙ্কে পাশ করতে হবে। না, হলে তো.......
তা আমাকে কি করতে হবে?
যদি কি করে পাশ করা যায় বলে দাও। আমি হুবুহু মুখস্ত করে ফেলতে পারি।
এটার জন্য তুমি আমার কাছে এলে কেন? আমাদের স্কুলে তো অঙ্কের অনেক ভালো ভালো স্যার রয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা ভালোভাবে বুঝিয়েও দেন।
তুর! স্যারেদের কাছে আবার যাওয়া যায় নাকি! আমি তো অঙ্কের কিছুই জানি না! স্যারেরা কিছু একটা বোঝানোর পর, বুঝিনি বললে আরো ক্ষেপে যায়। শুধু শুধু সময় নষ্ট হয়। বকুনিও জোটে। তাই বুঝতে না পারলেও যাই না। তোমাকে বললাম। যদি বলে দাও, তাহলে পাশ করে যাব।
ঠিক আছে, আমি সময় মতো তোমাকে দেখিয়ে দেবো।
এই কথা শুনে ছেলেটি আর সেখানে দাঁড়ালোই না। যেন কতই না বড় রাজকাজ করে ফিরলো। এই ভঙ্গিমায় হঠাৎ আমার সামনে থেকে উধাও হয়ে গেল। আমি তো ছেলেটির ঘটনাটি বাড়িতে বললাম। মা বললেন, ঠিক আছে, তবে নিজের পড়া সামলে এসব করো।
কিন্তু আমি নিজে জানি মানে তো এই নয় যে জানাতেও পারি। সব থেকে বড় কথা, ছেলেটির মাথা থেকে অঙ্কে পাঁচ পাওয়ার ভূত ছাড়াতে হবে। তাকে জানাতে হবে যে, সে অঙ্ক পারে।
এটা যে কত কঠিন কাজ! যাই হোক, আমি একটু অন্য ভাবে তাকে দেখলাম। প্রতিদিন স্কুলের পর তার সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানো, আর নানান গল্প। বেশ কয়েকদিন এইভাবে চলার পর, নাইনের বার্ষিক পরীক্ষায় সে 14 পেল। মানে আবারও ফেল!
কিন্তু একজন ছাত্র ফেল করার পরও কত যে আনন্দিত হতে পারে, সেদিন তাকে দেখেছিলাম। আমাকে দেখে জানালো যে, অঙ্কে পাঁচ পাওয়ার যে নিয়ম চলছিল, তা ভেঙে গেছে। অর্থাৎ মাধ্যমিকে সে পাশ করবেই। যাই হোক, তার পর থেকে আর কোনো অসুবিধা হয় নি। মাধ্যমিকে অঙ্কে লেটার মার্কস নিয়েই পাসও করেছিল।
এই ঘটনাটা এখানে উল্লেখ করলাম, তার কারণ হলো, আমি দেখেছি শুধুমাত্র "আমি পারি"- এই একটি লাইনই একজনের উন্নতির জন্য যথেষ্ট। এখানে সেই নাইনের ছেলেটির নাম উল্লেখ করলাম না। তবে আমার মনে হয় ঘটনাটিতে ছেলেটির নাম মুখ্য নয়!
যারা আজকের লেখাটি পড়লে, তাদের মধ্যে যদি কেউ থেকে থাকে যারা "আমি পারি" চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত, তারা আমাকে srijanservice.2018@gmail.com এ মেইল করতে পারো।
যাদের এখনও মাথার মধ্যে রয়েছে, আমি কি করে পারবো? তাদের জন্য বলি, জড়তা কাটিয়ে ওঠো, আসতে আসতে দেখবে, সবই পারছো। প্রথম প্রথম একটু বেশি প্রাকটিস, তার পরে কমে যায়।
আসলে গণিতের সমস্যায় যত বেশি "আমি পারি" বলতে শিখবো, ততই আমাদের বেশী নম্বর পাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। আর মজার জিনিস হলো,গণিতের এই "আমি পারি" ধারণা, গণিত ছাড়া অন্য বিষয়েও নম্বর বাড়িয়ে দেয়। তাই সার্বিক ভাবেও রেজাল্ট ভালো হয়।
যদি কারো মনে কোন প্রশ্ন জন্মায়, যার উত্তর পাচ্ছো না, সেই প্রশ্নও আমাকে জানাতে পারো। আমি চেষ্টা করবো তার উত্তরও তোমাদের দেওয়ার।
★★আজকে যা শিখলাম★★
"আমি পারি" জানাতে শিখবো।
No comments:
Post a Comment