Wednesday, 12 January 2022

চলো, অঙ্কের ভয় কাটাই 03



    যারা যারা আমাকে জানিয়েছো, তারা অঙ্ক করতে পারা স্বীকার করতে ভয় পাও না, তাদের প্রত্যেককে বলছি, আমি তোমাদের জানা ঘটনা নিয়েই প্রতিদিন শুরু করবো। আমরা যারা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত, মানে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, পার্শ্বশিক্ষক-পার্শ্বশিক্ষিকা, অভিভাবক, বা যারা শিক্ষা শেষ করার পর বিভিন্ন পেশায় যুক্ত, তারা প্রত্যেকেই জানি শিক্ষার ফলাফল পুরোপুরি নির্ভর করে অনুশীলনের উপর। আমরা পড়ে অনুশীলন করতে পারি, লিখে অনুশীলন করতে পারি, বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে অনুশীলন করতে পারি, বা অন্য কারো সাথে আলোচনায় অনুশীলন করতে পারি। 

    এক্ষেত্রে সারা দিনের ঠিক কতটা সময় আমরা অনুশীলন করলাম, এটা ঠিক বিচার্য বিষয় নয়। আমরা সারা দিনে জানা বিষয়ের কতটা অংশ অনুশীলন করে মনে রাখতে চাইলাম, তা গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। অনেক ঘটনাই থাকে, যা অনুশীলন না করলেও মনের মধ্যে ঠিক রয়ে যায়। আসলে সেই সব ঘটনাগুলি মনের মধ্যে বেশ গভীর দাগ ফেলে। তাহলে আমার শিক্ষার যে যে অংশগুলি মনের মধ্যে গভীর ভাবে রাখতে চাই, সেগুলোকে আলাদা রাখলেই হল! 

    আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম, সবে হাঁটতে শিখেছি। কাজের মধ্যে শুধুই খাওয়া আর ঘুম, তখন থেকেই কিন্তু আমাদের অঙ্ক শেখা শুরু হয়ে গিয়েছিল। একটু বড় হওয়ার পর আস্তে আস্তে মুখে মুখে, বাড়ির সব বড়দের সাথে গুনতে শিখেছি। তখনও হয়তো কোনো সংখ্যাকে কিভাবে লিখতে হয় শেখা হয়নি। বা যা দিয়ে গুনলাম, সেগুলো যে সংখ্যা, তাও হয়তো জানতাম না! 

    এখন কিন্তু প্রত্যেকেই জানি। আমরা প্রথমে যখন গুনতে শিখি তখন এক থেকে দশ পর্যন্তই শিখেছি। তাও আবার অনেক কিছু বাস্তব ঘটনার সাথে মিলিয়ে। যার মধ্যে ইতিহাস, ভূগোল, সময়, মহাকাশ, ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা, সব কিছুকেই দেখেছি। তবে তাদের ভাগ গুলো তখন জানতাম না। 

    এগুলো শেখানোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, গোনার সময়ে আমরা যে সব সংখ্যাকে ব্যবহার করবো তার একটা স্পষ্ট ধারণা যেন সর্বদা চোখের সামনে ভাসে। পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ - একটিই। তাই একের ধারণাটা খুব সহজে মাথার মধ্যে গভীর দাগ কাটতে পারে। ছোট থেকেই চাঁদকে চিনেছি। সেখানের অনেক গল্প ঠাকুমা-দাদুর থেকে শুনেছি। যা আমাদের মনে "এক" সংখ্যাটির ধারণা দৃঢ় করেছে। 

    কিন্তু দশের পরও যে সংখ্যা হয়, তা শিখেছি আরও পরে। দশের ধারণা বদ্ধমূল হওয়ার পর। ততদিনে এক দশ, দুই দশ প্রভৃতি শিখে নিয়েছি। ফলে একশো পর্যন্ত শিখতে আর অসুবিধা হয়নি। এখন কিন্তু আমরা আরও অনেক বড় সংখ্যাও শিখে ফেলেছি। 

    এইভাবে যখন শিখছিলাম, তখন লেখার জন্য আমরা কতকগুলো চিহ্নকে শিখি। যেগুলো দিয়ে বিভিন্ন সংখ্যাকে চেনানো হতো। এখানে একটা মজার ঘটনা মনে পড়ছে। একবার আমার ছেলেকে আমার স্ত্রী পেন দিয়ে খাতায় লিখে সংখ্যা চেনাচ্ছিলো। তো শেখানোর সময়ে বিছানার উপরে পাশাপাশি বসার বদলে সামনা সামনি বসে ছিল। ছেলেও মন দিয়ে দেখছিলো, মা কিভাবে কোন সংখ্যাটা লিখছে। মনে মনে দেখে দেখে ভালো ভাবে রপ্ত করে নিয়ে ছিল। 

    কিছুক্ষণ পরে অর্ক বলে, আমার ছেলের নাম অর্ক, মা, আর দেখাতে হবে না, আমি সব গুলো শিখে নিয়েছি। আমিও লিখতে পারবো। 

    ঠিক আছে, তুমি যখন পারবে, তখন এক থেকে দশ পর্যন্ত লিখে দেখাও। 

    দাও, লিখে দিচ্ছি। তার পরে কিন্তু আর পড়বো না। 

    ঠিক আছে। লিখে ফেললে ছুটি। 

    দাও, বলে খাতাটাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় এবং পেন নিয়ে লিখতে শুরু করে। খুব তাড়াতাড়ি লেখা শেষ করে। লেখা শেষ হওয়ার পর আর অপেক্ষা করে না। খাতাটি বন্ধ করে বিছানাতেই ফেলে রেখে তখনকার মতো ছুটির মজা নিতে উৎসুক হয়ে ওঠে। 

    দেখি, কি লিখলি? 

    খাতা তো তোমার সামনেই আছে, দেখে নাও। আমি এখন খেলছি। 

    এদিকে ওর মায়ের চক্ষু চড়কগাছ! কি লিখেছিস! চার বাদে (বাংলা হরফের অঙ্কে) তো বাকি সব ভুল হয়েছে! 

    না, তুমি যেমন যেমন দেখিয়েছো আমি তো সেরকমই লিখেছি!  

    এদিকে আয়। 

    মায়ের চোখ বড় বড় দেখে, ভয়ে, খেলা ফেলে আবার মায়ের পাশে। আস্তে আস্তে বলে, দেখো, আগের পাতাতেই তো রয়েছে। তুমিই তো দেখিয়ে দিলে। আমি তো সেরকমই লিখেছি! 

    যা খাতাটা নিয়ে উপরের লাইব্রেরীতে, সেখানে বাবা আছে, দেখিয়ে নিয়ে আয়। 

    একথা শুনে অর্ক আর একটুও দেরী না করে খাতা নিয়ে আমার কাছে চলে আসে। আমাকে ওর লেখা দেখালে, দেখতে পাই, ও সবটা উল্টো লিখেছে। আমি জিজ্ঞেস করি, কে শেখালো তোকে? 

    কাঁদো কাঁদো মুখে মায়ের নামে নালিশ করে। 

    তাহলে তো তোর সবটা শেখা হয়ে গেছে, কি বল? 

    আমি তো লিখেও দিয়েছি। 

    হ্যাঁ, লিখেছিস। কিন্তু কি হয়েছে জানিস, মা যখন শেখাচ্ছিলো, তখন তুই সামনে থেকে দেখছিলিস। আর সেজন্য মায়ের লেখার সাথে উল্টে দেখেছিস। তাই শেখাটাও উল্টো শিখেছিস। 

    এবারে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে, অর্কও হেসে ফেলে। তবে তার পরে সোজা হরফ শিখতে আর বেশী সময় লাগে নি। 

    আমি শুধু একটুখানি সংযোজন করবো। যে সব চিহ্ন দিয়ে আমরা কোন সংখ্যাকে প্রকাশ করি, তার মধ্যে 0, 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9 -এই দশটি চিহ্নকে অঙ্ক বলে। 

    অঙ্কের কাজ হল শুধুমাত্র সংখ্যা তৈরী করা। 

    আর ছোট থেকে আমরা যে গুনতে শিখেছিলাম, সেই গোনার সময়ে আমরা যে সব সংখ্যা ব্যবহার করেছিলাম, তাদের স্বাভাবিক সংখ্যা বলে। 

    মনে রাখার উপায় হিসাবে বলতে পারি, গোনার জন্য স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ভাবে যে সব সংখ্যা ব্যবহৃত হয়, তাদের স্বাভাবিক সংখ্যা বা Natural Number বলে। 

    যারা অঙ্ক ও স্বাভাবিক সংখ্যা জানতে, অথবা এখন জানো, তারা আমাকে 
srijanservice.2018@gmail.com এ মেল করে জানিয়ে দিও। আমিও জানতে পারব। 



    ★★আজকে যা শিখলাম★★
অঙ্ক এবং স্বাভাবিক সংখ্যা জানি। 

No comments:

Post a Comment