Thursday, 27 January 2022

চলো, অঙ্কের ভয় কাটাই 06

    আমরা যারা এখন বিভাজ্যতার নানাবিধ নিয়ম জানি, তারা প্রত্যেকেই যদি স্বাভাবিক সংখ্যা নিয়ে খেলা শুরু করি এবং প্রাচীনকালের একজন মনীষীর মত ভাবি, তাহলেই আমরা নতুন একটি ঘটনা উপলব্ধি করতে পারবো। 

    আগেই আমরা যখন বীজগাণিতিক পদ্ধতি হিসাবে গুণ শিখেছিলাম, তখনই একটি বিশেষ পদ "গুণিতক" সম্বন্ধে জেনেছিলাম। এখন সেই বিভিন্ন সংখ্যার গুণিতক কিভাবে আমাদের স্বাভাবিক সংখ্যাগুলির বিভাগ শেখায়, তা জানব। 

    এখানে প্রাচীনকালের যে মনীষীর কথা বলছিলাম, তিনি গ্রিক গণিতজ্ঞ ইরাটোস্থিনিস (Eratosthenes)। যিনি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে স্বাভাবিক সংখ্যার মধ্যে মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা আলাদা করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। 

    এখন আমরা এক থেকে একশো পর্যন্ত স্বাভাবিক সংখ্যার মধ্যে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা শিখব। একটা আয়তকার কাগজে পরপর সাজিয়ে 1 থেকে 100 পর্যন্ত সংখ্যাগুলি লিখবো। লেখার পর প্রথমেই এক সংখ্যাটিকে কেটে দেব। কারণ 1 মৌলিক সংখ্যা বা যৌগিক সংখ্যা নয়। এরপর 2 সংখ্যাটিকে একটি গোল দাগের ভিতরে রেখে, 2 এর সব গুণিতকগুলিকে কেটে দেব। এর পরবর্তী ক্ষেত্রে 2 এর পরের সংখ্যা যা এখনো কাটা হয়নি, তা হলো 3। তাই 3 সংখ্যাটিকে একটি গোল দাগের ভিতরে রেখে, 3 এর সব গুণিতকগুলিকে কেটে দেব। যেগুলো আগেই কাটা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলিকে দুবার কাটার দরকার নেই। এরপর 3 এর পরবর্তী সংখ্যা যা এখনো কাটা হয়নি, তা হল 5। তাই 5 সংখ্যাটিকে গোল দাগের ভিতরে রেখে, 5 এর সব গুণিতকগুলিকে কেটে দেব। আবার পরবর্তী না কাটা সংখ্যা নিয়ে একই পদ্ধতি অনুসরণ করবো, যতক্ষণ না পর্যন্ত আয়তকার কাগজে লেখা সমস্ত সংখ্যা কাটা বা গোল দাগযুক্ত হয়। 

    সবটা হয়ে গেলে যে সংখ্যাগুলি গোল দাগের ভিতরে রয়েছে, সেগুলোই মৌলিক সংখ্যা। এভাবে আমরা মৌলিক সংখ্যাগুলিকে জানার পর তাদের এক জায়গায় জড়ো করা শিখব। এখানে যে পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা মৌলিক সংখ্যা নির্ণয় করলাম, তাকে ইরাটোস্থিনিস এর চালুনি (Sieve of Eratosthenes) বলে। 

    1 থেকে 100 পর্যন্ত স্বাভাবিক সংখ্যা নিয়ে এই পদ্ধতি নিজে একবার করার পর আমরা 1 থেকে শুরু করে 100 এর থেকে অনেক বড় সংখ্যা পর্যন্ত নিয়ে বাড়িতে অনুশীলন করতে পারি। তাহলে অনেক বড় বড় মৌলিক সংখ্যা সম্বন্ধে জানতে পারবো, যা পরবর্তীকালে সংখ্যাকে সমস্যায় ব্যবহার করার সময়ে অনেক সুবিধা এনে দেবে। 

    আমার মনে হয়, প্রত্যেকেই জানি, যে সব স্বাভাবিক সংখ্যা 1 এবং সেই সংখ্যা ছাড়া অন্য কোনো স্বাভাবিক সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য নয়, তাদের মৌলিক সংখ্যা বলে। এবং যেসব স্বাভাবিক সংখ্যা 1 এবং সেই স্বাভাবিক সংখ্যা ছাড়াও অন্য কোন স্বাভাবিক সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য, তাদের যৌগিক সংখ্যা বলে। 

    উপরের পদ্ধতিতে যে সংখ্যাগুলিকে গোল দাগের ভিতরে রাখা হয়েছিল, সেগুলি মৌলিক সংখ্যা। তাহলে গোল দাগ দেওয়া শুরু করার সময়ে, 1 সংখ্যাটিকে বাদ দিয়েছিলাম কেন? আমরা মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যার সংজ্ঞায় দেখেছি, প্রতিটি স্বাভাবিক সংখ্যা এক দ্বারা বিভাজ্য। তাহলে এক সংখ্যাটিকে গোল দাগ দিলে এক বাদে আয়তকার কাগজের বাকি সব সংখ্যাগুলিকে কেটে দিতে হয়। তখন আর কোনো আলাদা আলাদা বিভাগ করতেই পারব না। সেই কারণেই আমরা প্রথম মৌলিক সংখ্যা হিসেবে দুই সংখ্যাটিকে গোল দাগের ভিতর রাখবো। 

    কোন একটি স্বাভাবিক সংখ্যা মৌলিক কিনা পরীক্ষা করার জন্য আমরা আগে থেকে তৈরি করা ইরাটোস্থিনিস এর চালুনি ব্যবহার না করে ইরাটোস্থিনিস এর পদ্ধতি অনুসরণ করেও জানতে পারবো। এখানে আগে থেকে নির্ণয় করে রাখা মৌলিক সংখ্যা শ্রেণীর প্রয়োগ করতে দেখব। 

    যেমন- 113 সংখ্যাটি মৌলিক কিনা পরীক্ষা করার জন্য আমরা প্রথম মৌলিক সংখ্যা 2 দিয়ে বিভাজ্যতার নিয়ম মেনে পরীক্ষা করবো। 

    এখানে 113 সংখ্যাটি 2 দ্বারা বিভাজ্য নয়। 2 এর পরবর্তী মৌলিক সংখ্যা 3। 

    113 সংখ্যাটি 3 দ্বারা বিভাজ্য নয়। 3 এর পরবর্তী মৌলিক সংখ্যা 5। 

    113 সংখ্যাটি 5 দ্বারা বিভাজ্য নয়। 5 এর পরবর্তী মৌলিক সংখ্যা 7। 

    113 সংখ্যাটি 7 দ্বারা বিভাজ্য নয়। 7 এর পরবর্তী মৌলিক সংখ্যা 11। 

    113 সংখ্যাটি 11 দ্বারা বিভাজ্য নয়। 11 এর পরবর্তী মৌলিক সংখ্যা 13, কিন্তু 11 দিয়ে ভাগের ক্ষেত্রে ভাগফল হয় 10, যা পরবর্তী মৌলিক সংখ্যা 13 এর থেকে ছোট। তাই আর পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করার প্রয়োজন নেই। এখন আমরা বলতে পারি, 113 সংখ্যাটি 1 এবং 113 ছাড়া অন্য কোন স্বাভাবিক সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য নয়। তাই 113 সংখ্যাটি একটি মৌলিক সংখ্যা। 

    এইভাবে আমরা যেকোনো স্বাভাবিক সংখ্যা নিয়ে অনুশীলন করে সংখ্যাটি মৌলিক সংখ্যা কিনা পরীক্ষা করে দেখতে পারি। আর যত বেশি স্বাভাবিক সংখ্যা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখবো, আমাদের সংখ্যা সম্বন্ধে ধারণা ততই দৃঢ় হবে, যা স্বাভাবিক কারণেই আমাদের ব্রেনের মধ্যে গভীর দাগ ফেলবে। 

    এই পর্যন্ত পড়ার পর আজকে ঠিক কতগুলি দুই অঙ্কের বা কতগুলি তিন অঙ্কের স্বাভাবিক সংখ্যা নিয়ে নিজেরা পরীক্ষা করলে, তা আমাকে 
srijanservice.2018@gmail.com এ মেল করে জানিয়ে দিও, যাতে আমি জানতে পারি ঠিক কতজন চারটি বা তার বেশি অঙ্কের স্বাভাবিক সংখ্যা নিয়ে পরীক্ষা করার মত ধৈর্য দেখাতে পারো। 

    যারা এখনো মৌলিক বা যৌগিক সংখ্যা নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হও, বা সমাধানের উপায় দেখতে পাচ্ছ না, তারাও আমাকে জানাতে পারো। আমিও তাহলে সমস্যাটি বুঝতে পারবো। 






★★আজকে যা শিখলাম★★
    মৌলিক ও যৌগিক সংখ্যা জানি। 

No comments:

Post a Comment