আজকে আমরা নতুন একটি ধারণা শিখবো। যা হয়তো জেনে বা না জেনেই আমরা ব্যবহার করি। আমাদের হয়তো প্রত্যেকেরই একটু আধটু চা-এর অভ্যাস আছে। সারাদিনের বিভিন্ন সময়ে, সুযোগ পেলেই চায়ের আড্ডায় সময় কাটাতে আমাদের সকলেরই বেশ ভালো লাগে। কখনও লেবু চা, আবার কখনও বা দুধ চা। আবার কখনও শুধুই লিকার।
কাপ-প্লেটের সেট যখন আমরা বাজার থেকে কিনে আনি, দেখেছি তাতে কয়েকটা কাপ, কয়েকটা প্লেট, চিনি রাখার পাত্র, লিকার রাখার পাত্র প্রভৃতি থাকে। আবার যখন সরবত সেট কিনে আনি, তাতে বড় সরবতের পাত্র, কয়েকটা গ্লাস প্রভৃতি থাকে। আমার মনে হয়, এই টি সেট বা সরবত সেট বা অন্য কোনো সেট আমরা প্রত্যেকেই জানলেও, যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, "সেট কাকে বলে?" তাহলে হয়তো অনেকেই বুঝিয়ে বলতে পারবো না।
আসলে সেট শব্দটি বাস্তবে প্রয়োগ করলেও, তা যে শেখার বিষয়, তা নিয়েও যে বইয়ের পর বই লেখা রয়েছে। তা কিছুতেই স্বীকার করতে চাই না। এই না চাওয়ার একটা কারন হল, আমরা পড়তে চাই না। তার উপরে আবার পড়ার বই ছাড়া অন্য বই! তার থেকে বরং উপর উপর একটা ধারণা করে নেওয়া ভালো, নাই বা আমি শিখলাম!
আর আমার এই জায়গাটাতেই আপত্তি আছে। আমি যাদের শেখাই, তাদের না শেখা পর্যন্ত, অপেক্ষা করতে পারি। তার শেখার জন্য নানান প্রশ্ন থাকতে পারে, তার সবকটির উত্তর না জানলে শেখাটাও সম্পূর্ণ হয় না। আর সেই সব ক্ষেত্রেই আমরা সমস্যা সমাধানে আটকে যাই। তাই যখনই যা শিখবে, তার খুঁটিনাটি বিষয়ের উপর থেকে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা দরকার হয়ে পরে।
যেমন, এক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র সেটের সংজ্ঞা শিখেই থেমে না গিয়ে, সেটের বিভিন্ন ঘটনা বা অংশ নিয়ে শেখার চেষ্টা করবো।
জার্মান গণিতজ্ঞ গেয়র্গ কান্টর (1845-1918) সেট সম্পর্কে ধারণা সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা করেন। তাঁর ধারণা অনুযায়ী, কতকগুলি সুসংজ্ঞায়িত এবং সুনির্দিষ্ট বস্তু বা ঘটনা বা চিন্তাজগতের বস্তুর সুনির্ধারিত সংগ্রহকে সেট বলে।
এখানে দেখা যায়, একটা সংকলনকে সেট হবার জন্য দুটি শর্ত পালন করতে হয়।
i) সুসংজ্ঞায়িত:- যে যে বস্তু বা ঘটনা বা কাল্পনিক ঘটনার সমন্বয়ে সংকলনটি তৈরী হয়, তাদের প্রতিটি সুসংজ্ঞায়িত হতে হবে। টি সেটে, কাপ বা প্লেট বা টি-পটকে আমরা আলাদা ভাবে জানি। যে বস্তু বা ঘটনা বা কাল্পনিক ঘটনা নিয়ে সেট তৈরী হয়, তাদের ক্ষেত্রে এমন কোনো বর্ণনা ব্যবহার করা যাবে না, যা নিয়ে কোনো প্রকার মতভেদ থাকতে পারে।
ii) সুনির্দিষ্ট:- যে যে বস্তু বা ঘটনা বা কাল্পনিক ঘটনা সমন্বয়ে সংকলনটি তৈরী হয়, তাদের প্রতিটি সুনির্দিষ্ট হতে হবে। টি সেটে ছয়টি কাপ থাকলে, আমরা যদি 1, 2, 3, 4, 5, 6 এরূপ নাম্বারিং করি এবং তারপর একটি কাপ ভেঙ্গে দিলে, নির্দিষ্ট নম্বরের কাপটিই ভাঙ্গে। এখানে তাদের সুনির্দিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
যে সব বস্তু বা ঘটনা বা কাল্পনিক বস্তু বা ঘটনা, যা দিয়ে সেট তৈরী হয়, তাদের সেটের উপাদান (Elements of Set) বলে। সেট লেখার সময়, দ্বিতীয় বন্ধনীর ({})-এর মধ্যে সেটের উপাদানগুলিকে কমা (,) দ্বারা আলাদা করে লেখা হয়। সাধারণত ইংরাজী ক্যাপিটাল লেটার ব্যবহার করে সেট প্রকাশ করা হয়।
সেটের কোনো উপাদানকে লেখার সময ∈ (belongs to) চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আর কোনো উপাদান সেটের অন্তর্গত নয় বোঝাতে, ∉ (not belongs to) ব্যবহার করা হয়।
আবার লিখে সেট প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত দুটি পদ্ধতি মেনে চলবো। এর মধ্যে প্রথমটি হলো তালিকা পদ্ধতি বা রোস্টার পদ্ধতি (Tabular Method or Roster Method)। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি উপাদানকে কমা (,) দ্বারা আলাদা করে দ্বিতীয় বন্ধনীর ({}) মধ্যে লিখে সেট প্রকাশ করা হয়। যেমন-
A = { a, e, i, o, u }
আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো সেট গঠন পদ্ধতি (Set builder method or Rule method)। এই পদ্ধতিতে সেট লেখার সময়ে, দ্বিতীয় বন্ধনের ({}) মধ্যে একটি চলরাশি লেখার পর, কোলন (:) লিখে, তার পরে উপাদান নির্ণয়ের জন্য সাধারণ ধর্মের উল্লেখ থাকে। এক্ষেত্রে সকল উপাদানগুলি সুনির্দিষ্ট ভাবে লেখা থাকে না, বদলে সুনির্দিষ্ট ধর্ম লেখা হয়।
এর পর আমরা কয়েকটি নির্দিষ্ট সেটের ভাগ শিখবো। প্রথমেই সসীম সেট সম্বন্ধে জানবো। কোনো সেটে যদি নির্দিষ্ট সংখ্যক উপাদান থাকে, তবে তাকে সসীম সেট বলে। যেমন-
A = { a, e, i, o, u }
এটি একটি সসীম সেট। এখানে A সেটের উপাদান সংখ্যা 5।
একইভাবে আমরা অসীম সেট জানবো। যে সেটের উপাদান সংখ্যা অসীম অর্থাৎ গণনা করে শেষ করা যায় না, তাকে অসীম সেট বলে। যেমন-
B = { x : x হল বিজোড় সংখ্যা }
এটি একটি অসীম সেট। কারণ ঠিক কতগুলি উপাদান B সেটে রয়েছে, তা গণনা করে বের করা যায় না।
সেটের আলোচনা করার সময়, এমন একটি সেট ধরে নেওয়া হয়, যাতে আলোচ্য সেটগুলির সব সদস্য অন্তর্ভুক্ত হয়। সেই সেটকে সার্বিক সেট (Universal set) বলে। সাধারণত U দ্বারা সার্বিক সেট প্রকাশ করা হয়। সকল সেটই সার্বিক সেটের উপসেট।
সার্বিক সেটের আলোচনায় একটি নতুন শব্দ পেলাম: উপসেট। এটি জানার সময় অধিসেটও জানবো। A সেটের সকল উপাদান B সেটের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু B সেটে এমন সদস্যও থাকতে পারে, যা A সেটে নেই। তাহলে A সেটকে B সেটের উপসেট (subset) এবং B সেটকে A সেটের অধিসেট (superset) বলে।
পরে আরও ভালো ভাবে সেটতত্ত্ব শিখবো। এখন শুধুমাত্র স্বাভাবিক সংখ্যার সেট তৈরী করা শিখবো। সাধারণত N দ্বারা স্বাভাবিক সংখ্যার সেট বোঝানো হয়। যেমন-
N = { 1, 2, 3, 4, 5, 6, ......... }
অথবা, N = { x : x হল স্বাভাবিক সংখ্যা }
স্বভাবতই N একটি অসীম সেট। আবার
A = { x : x হল জোড় সংখ্যা },
B = { x : x হল বিজোড় সংখ্যা },
C = { x : x হল 3 এর গুণিতক } প্রভৃতি সব কটি সেটই স্বাভাবিক সংখ্যার সেট N এর উপসেট।
যারা এখন স্বাভাবিক সংখ্যার সেট লিখে প্রকাশ করতে পারো, তারা আমাকে
srijanservice.2018@gmail.com এ "স্বাভাবিক সংখ্যার সেট লিখতে পারি" লিখে মেল করো, যাতে আমিও জানতে পারি।
যারা সেট সম্বন্ধে আরও বেশি জানতে চাও, তারাও আমাকে মেল করতে পারো। আর এই "চলো, অঙ্কের ভয় কাটাই" সিরিজে অঙ্কের যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নিয়ে আদপেই ভয় কাটাতে পারবে।
★★আজকে যা শিখলাম★★
স্বাভাবিক সংখ্যার সেট প্রকাশ করতে পারি।
No comments:
Post a Comment