Friday, 26 January 2024

বিড়ম্বনা

    আজ 26 শে জানুয়ারী। 

সকলে জাতীয়তাবাদের ছবি নিয়ে ব্যস্ত! সেখানে এই ছবিটার মধ্যে কি আছে? হ্যাঁ, আজকে স্কুলে যখন বাসুদার ছবিটা তুলি, তখন বাসুদাই প্রশ্নটা করেছিল। 

    ছবিটা বাসুদাকে ভালো করে দেখানোর পর, বাসুদা শুধুই হেসেছিল। আসলে ছবিটা একটা বড় গল্পের ছোট্ট একটা মুহূর্ত। এবং এটাকে হয়তো শুধুই একটা মুহূর্ত বললে ভুল বলা হবে। এমন একটি মুহূর্ত যা নিজেই গল্পটাকে মনে করাতে পারে। 

      বলা ভালো, গল্পটির শুরু 2রা জানুয়ারী, 2024, যেদিন আমাদের স্কুল অর্থাৎ আসন্ডা আদর্শ শিক্ষা সদন আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলের জন্মদিনটিকে 75 বছর উদযাপন করার ঘোষণা করে। এই দিন প্লাটিনাম জুবিলির ঘোষণা হলেও, কিছু কাজ আগেই স্থির করা হয়েছিল। যেমন অনুষ্ঠানের বাজেট কত হবে বা ক্যাশিয়ার কাকে করা হবে, ইত্যাদি। 

     আমরাও সকলে সারা বছর ধরে নানা অনুষ্ঠানে প্লাটিনাম জুবিলি হ্যাশট্যাগ জুড়ে দিতে থাকি। এই কদিনেই বুক ডিস্ট্রিবিউশন, স্টুডেন্টস উইক পালন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিবেকানন্দের জন্মদিবস পালন, নেতাজীর জন্মদিবস পালন করার সময় 75 হ্যাশট্যাগ সাড়া ফেলেছে। 

     আজও সাধারণতন্ত্র দিবস। আবার 75 তম প্রজাতন্ত্র দিবস। তাই প্লানের বাইরেও কিছু করার চেষ্টা থেকেই যায়। তাইতো বিশেষ একটি পোস্টার তৈরী করতে আমাদের নেপালদাকে গতকাল রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত সময় নষ্ট করতে হয়! বিশেষ কিছু স্ক্রিপ্টের ভয়েস রেকর্ডিং ও এডিটিং করতে গতকাল রাত দেঢ়টা পর্যন্ত কুন্তলবাবুকে জেগে থাকতে হয়! 

     অনুষ্ঠানের শুরুর সময় আগে থেকে ঠিক করা থাকলেও মঞ্চসজ্জা শেষ না হওয়ায় একটু লেটে আজকের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আর শুরুর এই বিড়ম্বনা ছায়ার মতই শেষ পর্যন্ত জুড়ে ছিল যেন। অতিথিবর্গদের বরণ চলার মাঝেই উদ্বোধনী সঙ্গীত এনাউন্স করার পর দেখা যায়, হারমোনিয়াম স্টেজের পাশে নেই। সাথে সাথে ছুটে গিয়ে অফিস রুম থেকে হারমোনিয়াম নিয়ে আসা। তখনো অফিস রুমে প্রাইজ বাবদ বই এর প্যাকেটিং চলছে! 

      আজকের বিশেষ দিনে দিনটিকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে রাখতে এবং দিনটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মাননীয় প্রেসিডেন্ট মহাশয় টিচারদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেন। দায়িত্ব পালন না করলে প্রধান শিক্ষক মহাশয় বা ম্যানেজিং কমিটি কি করতে পারে তা হেডমাস্টারস ম্যানুয়ালে রয়েছে, এও জানান। 

    নানা ক্লাসের চারটি ছাত্রী একসাথে নাচের মাধ্যমে দিনটাকে উদযাপিত করার কথা ভেবেছিল। মাঝে কারেন্ট বিড়ম্বনা বাদ দিলে, খুব সুন্দর ভাবেই উপস্থাপিত করেছে। 

     দশম শ্রেণীর একটি ছাত্র রক্তনদীর ধারা পরিবেশনার সময় নিচে পাতা কার্পেট সরে যাওয়ায় এক স্থানে প্লাস্টিকের প্যাকেটে বালিতে রাখা পতাকা হেলে পড়ে। ছাত্রটির নানান শারীরিক কসরত অবশ্যই দেখার মত ছিল। 

     এর মাঝেই আমাদের ঘোষক মাননীয় অনুপ হাজরা বাবু আমাকে এবং মহিউদ্দিনকে, আমাদের কি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা ঘোষণার মাধ্যমে জানিয়ে দেন এবং ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করার কথা বলেন! 

     শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। আসলে দুটি অনুষ্ঠানই একসাথে চলতে থাকে। বিভিন্ন শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারী বা স্থানাধিকারিনীর পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় আমাদের স্কুলের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারী বা স্থানাধিকারিনীকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রতি শ্রেণীর প্রতি বিভাগে সর্বাধিক উপস্থিতি যার, তাকেও পুরস্কৃত করা হয়। স্কুলে সর্বাধিক দিন উপস্থিতির অধিকারীকেও বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়। 

     ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবার সময়ও বিড়ম্বনা পিছু ছাড়ে না! কল্যাণবাবুর নাম ঘোষণা করার পরও মঞ্চে না পাওয়ায় তার জায়গায় পুরস্কার তুলে দেন মাননীয় সুরজিৎবাবু। আবার এই ঘোষণার সময়েও ঘটে বিড়ম্বনা! ভুল করে বলা হয় সুরজিৎ দাস মহাশয়ের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হচ্ছে! 

     যাই হোক, বিড়ম্বনা থেকে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়তে জানি বলেই বোধ হয়, তাড়াতাড়ি ঘটনাটা সামলে নেওয়া গেছে। এর সাথে ছিল কতকগুলি বিশেষ পুরস্কার। যেগুলি বিশেষ ব্যক্তিবর্গ 75 হ্যাশট্যাগ মাথায় রেখে দান করেছেন! 

     মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যারা ইংরাজী, গণিত, ভূগোল, শিক্ষাবিজ্ঞান বা সংস্কৃত বিষয়ে সর্বাধিক নাম্বার পেয়েছে,  তাদের পুরস্কৃত করা হয়। 

     তবে ম্যানেজিং কমিটি বা শিক্ষকদের মধ্যেও একটা প্রশ্ন একটু নাড়া দিয়ে যায়। আগে জানলে হয়তো একটু অন্যরকম করেও ভাবা যেতে পারতো! 

     মাঝে কুন্তলবাবুকে ঘোষণা করে জানাতে হয়, যেসব শিক্ষক-শিক্ষিকা অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে বিদ্যাসাগর ভবনে বা অন্য কোথাও রয়েছেন, তাঁরা যেন অনুষ্ঠান মঞ্চের পাশে চলে আসেন। 

     শেষের দিকে এক জায়গায় দেখা যায়, দীপাঞ্জন বাবু এবং রনজিত বাবুকে বিশেষ একটি দায়িত্ব, দায়িত্ববানের মত বুঝিয়ে দিতে। যদিও দীপাঞ্জন বাবু বা রণজিৎ বাবু তা ঠিকমত পালন করলেন কিনা, দেখা হয়তো জরুরী নয়! 

     তবে যাই হোক না কেন, বাসুদার কথায়, আমি প্যান্ডেলের লোক। আগে আসতে হবে, প্যান্ডেল করতে হবে, আবার শেষে প্যান্ডেল খুলতেও হবে। 

     এত কিছুর পরেও অনুষ্ঠানের শেষে দেখা যায় বিস্কুটের প্যাকেটে মাঠ ভরে গেছে। মাঠের নানা জায়গায় বাঁশ পোতার জন্য গর্ত করা হয়েছিল, কিন্তু তা ঠিকমত বোজানো হয়নি। আমাদের শিক্ষক মহাশয় মাননীয় অলোকবাবুর ছবিতে ফুটে উঠেছে তার রোমহর্ষক কাহিনী। 

     কুন্তল বাবুকে তাপসদার হাতে দুটো এক্সট্রা লজেন্স দিয়ে সন্ধ্যায় লজেন্স খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিতে হয়। তাতেও হয়তো বাদ রয়ে যায় সৌমেনদার কথা। যার তৈরী করা ফ্লেক্সের স্কুল পর্যন্ত পৌঁছনোর কাহিনী। 

     তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বলতে হচ্ছে, সংবিধান প্রস্তাবনা We দিয়ে শুরু হলেও, আমরা হয়তো আজকেও আমিত্ব ছাড়তে পারিনি! 

     বাড়ি ফেরার পথে কিছুটা টোটোয় করে যেতে হয়। আজও সবটুকু ঠিক ছিল। মুন্সিরহাট থেকে টোটোয় কিছুটা যাবার পর দেখতে পাই, ড্রাইভার দাদা একটু যেন বেশী কাসছেন। হঠাৎই টোটো যেন রাস্তার পাশের দিকে, অর্থাৎ রাস্তা থেকে বাইরের দিকে এগিয়ে যায়। সবাই চেঁচিয়ে উঠলে, ড্রাইভার দাদা চমকে উঠে থামিয়ে দেন। তখন জানতে পারি, হঠাৎই কাশির কারনে ড্রাইভার দাদার একটু শারীরিক সমস্যা হচ্ছিল, যা তাঁকে বোধশক্তি হারিয়ে দিয়েছিল। আমাদের সকলের চেঁচামেচির কারনে আবার রহমত ড্রাইভারের সেন্স ফিরে আসে। চোখে মুখে ভালো করে জলের ঝাপটা দিয়ে কিছুক্ষণ পর আবার টোটো ছাড়ে। 

     তখন প্রায় পাঁচটা বাজে, একটু আগেই বাড়ি ফিরেছি। হঠাৎই ফোনটা বেজে ওঠে। ঠাকুরের ফোন! তবে কি ঠাকুর এখনো বাড়ি পৌঁছায়নি? আমার কথাই ইকো হয়ে ফিরে আসছে। ফোনটা কেটে দিয়ে, আবার ঠাকুরকে ফোন লাগাই। নেটওয়ার্কের সমস্যা হচ্ছে। কেটে যায়। 

     আবার ঠাকুরের ফোন। নেটওয়ার্কের সমস্যায় কাটা কাটা শব্দেও জানতে পারি, ফেরার পথে বাগনানে অ্যাক্সিডেন্টের সামনাসামনি হতে হয়। এইমাত্রই বাড়ি পৌঁছেছে। আর কিছু কথা হয় না, কেটে যায়। 

     কিন্তু বাসুদার পাশে ঘড়ির ছবিটা এখনো দেখিয়ে চলেছে সবে পৌনে দুটো বাজতে চলেছে! 

1 comment: