Saturday, 31 October 2020

দশমিক ভগ্নাংশ

দশমিক ভগ্নাংশ :- 

    কোন সামান্য ভগ্নাংশকে দশমিক বিন্দুর সাহায্যে প্রকাশ করা হলে তাকে বলে দশমিক সংখ্যা বা দশমিক ভগ্নাংশ। 

    দশমিকের ইতিহাস ভগ্নাংশের মতোই বহু প্রাচীন। তাই ইতিহাস ঘাটতে না বসে, এখন দশমিক সংখ্যা সম্বন্ধে কিছু জেনে নিই। পরে একদিন ভগ্নাংশ তথা দশমিকের ইতিহাস শোনাবো। 

    দশমিক সংখ্যার শ্রেণীবিভাগ:-  চোখে দেখে আমরা দশমিক সংখ্যাকে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা- 1) সসীম দশমিক ভগ্নাংশ, 2) আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ এবং 3) অসীম দশমিক ভগ্নাংশ। 

    সসীম দশমিক ভগ্নাংশ:- যে দশমিক ভগ্নাংশে দশমিক বিন্দুর পরে নির্দিষ্ট সংখ্যক অশূন্য অঙ্ক থাকে, তাকে সসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলে। 

    আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ:- যে দশমিক ভগ্নাংশে দশমিক বিন্দুর ডান দিকের অঙ্কগুলি বা তার অংশবিশেষ একই রূপে বারবার ঘুরে আসে, তাকে আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ বলে। 

    অসীম দশমিক ভগ্নাংশ:- যে দশমিক ভগ্নাংশে দশমিক বিন্দুর ডান দিকের অশূন্য অঙ্কগুলি অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত, আবার কোন ভগ্নাংশের পুনরাবৃত্তি ঘটে না, তাকে অসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলে। 

    দশমিক ভগ্নাংশের সামান্য ভগ্নাংশে রূপান্তরকরণ:- কোন দশমিক সংখ্যাকে সামান্য ভগ্নাংশে পরিণত করার জন্য প্রথমে দশমিক সংখ্যাকে দশমিক বিন্দু তুলে দিয়ে সবটুকু লিখব যা সামান্য ভগ্নাংশের লব হবে। এরপর  হরের জায়গায় এক লিখে দশমিক বিন্দুর পর যতগুলি অঙ্ক ছিল ঠিক ততগুলো শূন্য লিখব । এইভাবে পাওয়া সামান্য ভগ্নাংশ প্রদত্ত দশমিক ভগ্নাংশের সাথে মানে সমান হবে। 

    দশমিক ভগ্নাংশের যোগ:- দশমিক ভগ্নাংশের যোগের ক্ষেত্রে আমরা সংখ্যাগুলিকে এমন ভাবে উপর-নিচে সাজাবো যাতে প্রতিটি সংখ্যার দশমিক বিন্দু গুলো ঠিক নিচে নিচে থাকে। দশমিক বিন্দুর পর ডান দিকে যে সংখ্যাটিতে সবথেকে বেশি অঙ্ক আছে, সেটি বাদে বাকি সংখ্যার ক্ষেত্রে দশমিক বিন্দুর পর অশূন্য অঙ্কগুলির পরে শূন্য বসিয়ে সব সংখ্যায় দশমিকের পরে সমান সংখ্যক অঙ্ক করতে হবে। এরপর সাধারণ যোগের নিয়মে যোগ করতে হবে এবং দশমিকের ঠিক সোজাসুজি নিচে যোগফলে দশমিক বিন্দু বসাতে হবে। 
    যোগফলে দশমিকের পরে শেষ অশূন্য অঙ্ক পর্যন্ত রেখে বাকি শূন্য (যদি থাকে) গুলি বাদ দিতে হবে। ইহাই নির্ণেয় যোগফল। 

    দশমিক ভগ্নাংশের বিয়োগ:-  দশমিক ভগ্নাংশের যোগ এর মতই বিয়োগের ক্ষেত্রেও দশমিক বিন্দু ঠিক নিচে নিচে বসাতে হবে এবং শূন্য বসিয়ে দশমিকের পরে অঙ্কসংখ্যা সমান করতে হবে। এরপর সাধারণ বিয়োগের মতোই বিয়োগ করার পর, উপরের দশমিকের ঠিক নিচেই বিয়োগফলে দশমিক বিন্দু বসাতে হবে। 

    দশমিক ভগ্নাংশের গুণ:- দুই বা ততোধিক দশমিক সংখ্যার গুণের ক্ষেত্রে আমরা নিচের মত নিয়ম মেনে চলবো---
1) দশমিক বিন্দু তুলে দিয়ে যে সংখ্যা গুলি পাওয়া যায় তাদের গুণ করব। 
2) প্রদত্ত দশমিক সংখ্যা গুলিতে দশমিক বিন্দুর পর যতগুলি অঙ্ক আছে, তাদের সমষ্টি নির্ণয় করব। 
3) (1) এ যে ফল পাওয়া গেছে সেই সংখ্যাটি কতগুলি অঙ্ক নিয়ে গঠিত তা গুনে দেখব এবং শেষ থেকে গুনে (প্রয়োজনে আগে 0 বসিয়ে) (2) তে প্রাপ্ত সমষ্টির সমান সংখ্যক অঙ্ক দশমিকের পরে রেখে দশমিক বিন্দু বসাবো। দশমিক বিন্দুর আগে যদি কোন অঙ্ক না থাকে তাহলে 0 বসাবো, ইহাই প্রদত্ত দশমিক সংখ্যাগুলির গুণফল। 

    দশমিক ভগ্নাংশের ভাগ:- দশমিক ভগ্নাংশকে দশমিক ভগ্নাংশ দিয়ে ভাগ করার সময়ে দশমিক ভগ্নাংশ গুলোকে সামান্য ভগ্নাংশে পরিণত করার পর সামান্য ভগ্নাংশের ভাগ এর নিয়ম মেনে চলবো। 

    এখানে আরো কতগুলো বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন।
    পরিমাপের ক্ষেত্রে দশমিক সংখ্যা সাধারণত ত্রুটি হিসাব করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন- 
যেহেতু পরিমাপটি সাধারণত কিছু পরিমাপের ত্রুটির সাথে পরিচিত, যাকে সংকুচিত করে। পরিমাপের ফলগুলি প্রায়ই দশমিক বিন্দুর পরে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় দেওয়া হয়, যা শ্রুতিসীমা নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ- যদিও 0.080 এবং 0.08 একই দশমিক সংখ্যা বোঝায়। তথাপি প্রথম 0.080 সংখ্যাটি 0.001 এর চেয়ে কম ত্রুটি বোঝায় এবং দ্বিতীয় 0.08 সংখ্যাটি 0.01 এরচেয়ে কম ত্রুটি বোঝায়। 
    আবার পরিমাপ এর প্রকৃত মান 0.0802 বা 0.0798 হতে পারে, উভয় ক্ষেত্রেই তিন দশমিক পর্যন্ত আসন্ন মানে 0.080 বোঝায়। 

    তাই এখন আমরা আসন্ন মানে প্রকাশ করা শিখব।
    কোন একটি দশমিক সংখ্যাকে দশমিক এর পর নির্দিষ্ট সংখ্যক (n) মানে প্রকাশ করাকে আসন্ন মান বলে । আসন্ন মান নির্ণয় করার সময়ে আমরা এমন একটি সংখ্যা তৈরী করব যাতে দশমিকের পর n তম স্থানে 1 এর চেয়ে কম ত্রুটি হয়। 

    আসন্ন মান নির্ণয় পদ্ধতি:- আসন্ন মান নির্ণয় করার সময় প্রদত্ত সংখ্যার দশমিকের পর নির্দিষ্ট সংখ্যার পরের অঙ্কটি -----
a) 0, 1, 2, 3 অথবা 4 হলে শুধু বাদ যাবে। 
b) 6, 7, 8, 9 হলে বাদ যাবার সাথে আগের অঙ্কে 1 যোগ করতে হবে। 
c) 5 হলে - 
i) 5 এর ডান দিকে কোন একটি অশূন্য অঙ্ক থাকলে 5 বাদ যাবার পর, 5 এর আগের অঙ্কে 1 যোগ করতে হবে। 
ii) 5 ই শেষ অশূন্য অঙ্ক হলে, 5 এর আগের অঙ্কটি জোড় না বিজোড় তা দেখতে হবে। জোড় হলে শুধু 5 অঙ্কটি বাদ যাবে। এবং বিজোড় হলে 5 অঙ্কটি বাদ যাবার সাথে 5 এর আগের অঙ্কে 1 যোগ করতে হবে। 

    আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশকে সামান্য ভগ্নাংশে পরিণত করা:-
     আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশকে সামান্য ভগ্নাংশে পরিণত করার সময়ে আমরা নিচের নিয়ম মেনে চলবো। 
1) দশমিক বিন্দু এবং আবৃত্ত দশমিক তুলে দিয়ে সংখ্যাটি লিখে, তা থেকে আবৃত্ত দশমিকের আগে যা আছে দশমিক তুলে পাওয়া সংখ্যাটি বিয়োগ করবো। এই বিয়োগফল সামান্য ভগ্নাংশের লব হবে। 
2) যতগুলি অঙ্কে আবৃত্ত দশমিক থাকবে ঠিক ততগুলো নয় পাশাপাশি লিখব, এবারে প্রদত্ত সংখ্যায় দশমিক বিন্দু থেকে প্রথম আবৃত্ত দশমিক যে অঙ্কের মাথায় রয়েছে তার আগে পর্যন্ত যতগুলি অঙ্ক থাকবে ততগুলি শূন্য 9 এর পরে লিখব। এটাই সামান্য ভগ্নাংশের হর। 


No comments:

Post a Comment