( collected )
আদ্যপ্রাণী
আদ্যপ্রাণী বা প্রোটিস্টা (গ্রিক প্রোটিস্টন/প্রোটিস্টা - সবথেকে প্রথম) হল বিভিন্ন ধরণের সরল, ইউক্যারিওট, এককোশী, আণুবীক্ষণিক জীবের শ্রেণী যাদেরকে ছত্রাক, প্রাণী বা উদ্ভিদ কোন বিভাগেই ফেলা যায় না ।
বৈশিষ্ট্য
i) এককোশী, আণুবীক্ষণিক প্রাণী ।
ii) দ্বিবিভাজন বা বহুবিভাজন পদ্ধতিতে শুধুমাত্র অযৌন জনন সম্পন্ন করে ।
iii) সাধারণত এককোশী দেহে একটিমাত্র নিউক্লিয়াস থাকে । ব্যতিক্রম - প্যারামিসিয়ামের দুটি নিউক্লিয়াস এবং ওপালিনাতে বহু নিউক্লিয়াস থাকে ।
iv) বিশেষ গমনাঙ্গের সাহায্যে গমন করে। যেমন-- অ্যামিবার ক্ষণপদ, প্যারামিসিয়ামের সিলিয়া এবং ইউগ্লিনার ফ্ল্যাজেলা আছে ।
v) শুধুমাত্র অন্তঃকোশীয় পরিপাক পদ্ধতি দেখা যায় ।
vi) সমগ্র দেহাবর্ণী দিয়ে ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্যাসীয় আদানপ্রদানের সাহায্যে শ্বসন প্রক্রিয়া চলে ।
vii) দেহে বিভিন্ন প্রকার গহ্বর বা ভ্যাকুওল (vacuole) দেখা যায় । যেমন-- a) খাদ্যগহ্বর, b) রেচনগহ্বর, c) জলগহ্বর, d) সংকোচনশীল গহ্বর ইত্যাদি ।
viii)সংকোচনশীল গহ্বরের সাহায্যে দেহের অতিরিক্ত জল দেহের বাইরে মুক্ত করে, অর্থাৎ দেহে জলের ভারসাম্য বজায় রাখে ।
ix) প্রোটোপ্লাজমের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কোশ অঙ্গাণু সৃষ্টি করে ।
x) দেহ গোলাকার, ডিম্বাকার অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনিয়তাকার ।
xi) বিভিন্ন প্রকারের পরজীবী প্রাণী ।
প্রোটোজোয়ার সংজ্ঞা :-
এককোশী আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী বলা হয় ।
ক্ষতিকর প্রোটোজোয়া ( Pathogenic Protozoa ) :-
আদ্যপ্রাণীদের মধ্যে কিছু প্রাণী মানবদেহে পরজীবীরূপে বসবাস করে এবং নানারকম রোগ সৃষ্টি করে । এখানে কয়েকটি আদ্যপ্রাণীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হল -
ম্যালেরিয়া-পরজীবী ( Malaria Parasite ) :-
প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স ( Plasmodium vivax ) নামে এক রকমের আদ্যপ্রাণী ( protozoa ) হল ম্যালেরিয়া রোগ সৃষ্টিকারী পরজীবী প্রাণী । এরা অন্তঃকোশীয় ( interacellular ) হওয়ায় অন্তঃপরজীবী ( endoparasite ) হিসেবে মানবদেহের যকৃৎ-কোশ বা লোহিত রক্তকণিকায় বসবাস করে এবং মানবদেহে ও অন্যান্য প্রাণীদেহে ম্যালেরিয়া রোগ সৃষ্টি করে । এদের অযৌন দশা মানবদেহে এবং যৌন দশা স্ত্রী-অ্যানোফিলিস মশার দেহে সম্পন্ন হয় । স্ত্রী-অ্যানোফিলিস এই পরজীবীর বাহক । ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রধান লক্ষণ হল কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, উচ্চ তাপমাত্রা এবং ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়া । এই জ্বরের তিনটি অবস্থা হল কম্পন অবস্থা, জ্বরাবস্থা এবং ঘর্মাবস্থা । সিঙ্কোনা গাছের উপক্ষার থেকে প্রাপ্ত কুইনাইন হল এই জ্বরের প্রতিষেধক ও নিরামক ঔষধ । 1880 খ্রিস্টাব্দে ফরাসী বিজ্ঞানী ল্যাভেরান ( Laveran ) প্রথম মানুষের রক্তে ম্যালেরিয়া পরজীবীর উপস্থিতি লক্ষ করেন । 1898 খ্রিস্টাব্দে রোনাল্ড রস ( Ronald Ross ) কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং তদানীন্তন প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতালে গবেষণা করে পাখির ম্যালেরিয়ায় অ্যানোফিলিস মশকীর ভুমিকা নির্ণয় করেন । রোনাল্ড রস তার ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত কাজের জন্য ( ম্যালেরিয়া পরজীবী আবিষ্কার এবং রোগবিস্তারে মশকীর ভুমিকা ) 1902 খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার পান ।
এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা ( Entamoeba histolytical ) :-
এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা মানবদেহের বৃহদন্ত্রে বসবাসকারী এক রকমের ক্ষতিকর প্রোটোজোয়া । এটি মানবদেহে, উদরাময়, আমাশয়, লিভার অ্যাবসেস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে । এন্টামিবা সংক্রামিত রোগকে সাধারণভাবে অ্যামিবিয়োসিস ( Amoebiasis ) বলে । এন্টামিবা পোষকদের বৃহদন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি করে । ফলে মলের সঙ্গে পুঁজ ও রক্ত এবং মিউকাস নির্গত হয় । তখন রোগী বারে বারে মলত্যাগ করে এবং মলত্যাগের সময় পেটে ব্যথা অনুভব করে । অনেক সময় রোগীর জ্বরও হতে পারে । এই লক্ষণগুলিকেই একসাথে আমাশয় রোগ আখ্যা দেওয়া হয় ।
Thanks khub sundor
ReplyDelete