Thursday, 13 April 2017

বিধান

                কর্মযোগ কি বলে ? ----- বলে , ' নিরন্তর কর্ম কর , কিন্তু কর্মে আসক্তি ত্যাগ কর । ' কোন কিছুর সহিত নিজেকে জড়াইও না । মনকে মুক্ত রাখো । যাহা কিছু দেখিতেছ , দুঃখ - কষ্ট ----- সবই জগতের অপরিহার্য পরিবেশ মাত্র , দারিদ্র ধন ও সুখ ক্ষণস্হায়ী , উহারা মোটেই আমাদের স্বভাবগত নয় । আমাদের স্বরূপ দুঃখ ও সুখের পারে ---- প্রত্যক্ষ বা কল্পনার অতীত , তথাপি আমাদিগকে সর্বদাই কর্ম �করিয়া যাইতে হইবে । আসক্তি হইতেই দুঃখ আসে , কর্ম হইতে নয় ।'                  ----------- স্বামী বিবেকানন্দ

                কর্মের জন্যই তো শিক্ষকতার পেশা বেছে নিয়েছেন বিধান কুমার গড়াই । বাড়ি মাধবডিহি , রায়না -II , বর্ধমান । কিন্তু স্কুলটা বাড়ি থেকে একটু দূরেই । মুর্শিদাবাদের সালার এ ।

                 যাই হোক , পেশাকেই কর্মযোগ মনে করে , বাড়িতে বুড়ো বাবা-মা , বউ-বাচ্ছাকে ফেলে রেখে সুদূর মুর্শিদাবাদে স্কুলের পাশে একটা ছোট ভাড়া ঘরে এসে উঠলেন । স্কুলে ছাত্র ছাত্রী খুব বেশি নয় , তাই প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীর প্রতি আলাদা করে লক্ষ্য করার সময় পেয়ে গেলেন ।

               চলল ছাত্রছাত্রীদের নতুন করে শেখানোর পালা । ছাত্রছাত্রীরাও নতুন স্যারকে আপন করে নিল । সমস্ত কিছুতেই ছাত্রছাত্রীদের আবদার নতুন স্যারের কাছে । স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও সব ভার বিধান বাবুর উপর ।

               ভালোই চলছিল , কিন্তু বাড়ি ছেড়ে এসে সারাটা দিন কেটে গেলেও সন্ধ্যার পর যেন সময় কাটতেই চায় না । তার উপর যে স্যাতস্যাতে ভাঙা বাড়ির একটা ঘরে ভাড়া থাকেন , সেই বাড়িতে এখনও কারেন্ট ঢোকেনি । সন্ধ্যার পর থেকেই পুরো বাড়িটা কেমন যেন ভুতুড়ে হয়ে ওঠে । প্রতিটি মুহুর্ত হয়ে ওঠে দুঃসহ ।

                  এমনি করেই দুই বছর কেটে গেল । হঠাৎ একটা সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে মনটা খুশিতে ভরে উঠল । চালু হয়েছে মিউচুয়াল ট্রান্সফার । চলল , কাছাকাছি বাড়ি থেকে যাতায়াত করা যাবে এমন স্কুল খোঁজার পালা ।

                  পেয়েও গেলেন । বাড়ি থেকে বাইকে ঘণ্টা দুয়েক লাগবে । হোক না দুই ঘণ্টা ----- প্রতিদিন বাড়িতে ফিরতে তো পারবে । আর কোনো ভাবনা চিন্তা না করেই 19 শে ডিসেম্বর , 2012 সালে হাওড়ার একটি স্কুলে যোগ দিলেন । ঐ স্কুলের অরিন্দমবাবুও বাড়ির কাছে স্কুল পেয়ে খুব খুশি ।

                  যাই হোক নতুন স্কুলেও সবাইকে আপন করে নিতে সময় লাগেনি ।

                  শুধু সময়ের ফাঁকে আটকে গেছে বিধানবাবুর 2013 সালের জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসের বেতন । মার্চ , 2013 থেকে রেগুলার হয়ে গেলেও ঐ দুই মাসের বেতন কবে পাবেন বা কিভাবে পাবেন তা সবারই অজানা । তাই তো প্রধান শিক্ষক মহাশয় Arear bill করে পাঠান ।

                  ADI অফিস তা received but not verified সিল লাগিয়ে জমা নিয়ে নেন । কিন্তু ওই পর্যন্তই !

                   আবার খোঁজ নিতে গেলে শুধুমাত্র ফাইল দেখার জন্য উপঢৌকন লাগে ! কোন্ টেবিলে আছে তা জানার পর কবে পাশ হবে তার কোন উত্তর নেই !

No comments:

Post a Comment