Showing posts with label #একক. Show all posts
Showing posts with label #একক. Show all posts

Sunday, 1 November 2020

সময়ের একক

    আগের অধ্যায়গুলোতে আমরা দেখেছি সময়কে পরিমাপ করতে না পারলে অনেক রাশিই ঠিক মতো পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আজকে আমরা সময়ের বিভিন্ন একক সম্বন্ধে জানবো। বাস্তবে বহু আগে থেকেই সময়কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করার প্রথা চলে এসেছে। 

    মোটামুটি যখন থেকে MKs পদ্ধতি বা S.I. পদ্ধতি অনুসরণ করা শুরু হয়েছে, তখনই সময়ের বিভিন্ন একককে সংজ্ঞায়িত করা শুরু, একথা বলা যায় না। তার অনেক আগে থেকেই আমরা বছর, মাস, দিন বা ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ড হিসাব করতে পারি। 

    সময় সম্বন্ধে একাধিক স্বতন্ত্র মতবাদ রয়েছে। একটি বিশেষ মতানুসারে, সময়, মহাবিশ্বের মৌলিক কাঠামোর অংশবিশেষ, যেটি একটি বিশেষ 'মাত্রা' এবং যেখানে ভৌত ঘটনাসমূহ একটি ক্রমধারায় ঘটে। এটি একটি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি, যা নিউটনের তত্ত্বসম্মত। এই মতানুসারে সময় একটি ভৌত রাশি, যা পরিমাপযোগ্য।

    অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে পার্থক্যকারীকে সময় বলা হয়। 

    সময়ের বিভিন্ন একক:- 
এছাড়াও
ও 
    এবারে আমরা বিশেষ কতগুলি সময়ের একক এর সংজ্ঞা শিখব। 

    দিন:- সূর্য ওঠা থেকে শুরু করে সূর্য অস্ত যাবার পর পুনরায় সূর্য ওঠা পর্যন্ত সময়কে একদিন ধরা হয়।
    জ্যোতির্বিজ্ঞানে পৃথিবীর আহ্নিক গতির একটি আবর্তন পূর্ণ হতে যে সময় লাগে তা হলো একদিন।তবে তা সূর্যের আপেক্ষিকভাবে সংজ্ঞাত সৌর দিন, যা বার্ষিক গতির কারণে নাক্ষত্র দিনের থেকে বা বিভিন্ন ঋতুতে স্বল্প তারতম্য যুক্ত। 
    ভাষাগত ভাবে দিনের সূর্যালোকিত অংশ হল দিন, আর অন্ধকার ভাগ রাত্রি। সে ক্ষেত্রে সারাদিনরাত বললে তবে পুরো 24 ঘন্টা বোঝায়। 

    সেকেন্ড:- সেকেন্ড হলো S.I. পদ্ধতিতে সময়ের মুল একক। সাধারণভাবে এবং ঐতিহাসিক সংজ্ঞা হিসাবে একদিনের 1/(24×60×60) ভাগ সময়কে এক সেকেন্ড বলে। প্রথমে দিনকে 24 ঘন্টায়, তারপর প্রতি ঘন্টাকে 60 মিনিটে, এবং অবশেষে প্রতি মিনিটকে 60 সেকেন্ডে ভাগ করা হয়। সাধারণত এনালগ ঘড়ি এবং হাতঘড়িতে 60 টি ভাগ করা থাকে। যেগুলি সেকেন্ড (এবং মিনিট) উপস্থাপন করে। ডিজিটাল ঘড়ি এবং হাতঘড়িতে সাধারণত দুই অঙ্কের সেকেন্ড গণনা করা হয়। যদিও এককের ঐতিহাসিক সংজ্ঞাটি পৃথিবীর আবর্তন চক্রের ভিত্তিতে ছিল, তথাপি S.I. পদ্ধতিতে 0 কেলভিন তাপমাত্রায় একটি অনুত্তেজিত সিজিয়াম-133 পরমাণুর 9192631770 টি কম্পন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে এক সেকেন্ড বলে। 

    জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ক্যালেন্ডার থেকে দিনের ষষ্টিক পদ্ধতিতে বিভাজন খ্রীষ্ট পূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকেই চলত। যদিও সে গুলি আজ আমরা যে সেকেন্ড জানি, তা ছিল না। সময়ের ছোট ছোট বিভাগগুলি তখন মাপা যেত না, সুতরাং এই জাতীয় বিভাগগুলি গাণিতিকভাবে করা হতো। 

    প্রথম যে ঘড়ি নির্ভুলভাবে সেকেন্ড গণনা করতে পারত, সেটি ছিল 17 শতাব্দীতে উদ্ভাবিত দোলক ঘড়ি। 

    1950 এর দশকে শুরু করে পারমাণবিক ঘড়িগুলি পৃথিবীর আবর্তনের চেয়ে ভালো ঘড়ি হয়ে ওঠে এবং তারা আজও সঠিক মান নির্ধারণ করে চলেছে। 

    ঘড়ি এবং সৌর সময়:- একটি যান্ত্রিক ঘড়ি, যা পৃথিবীর আপেক্ষিক ঘূর্ণন অবস্থান পরিমাপের উপর নির্ভর করে না, সেগুলি অভিন্ন সময় রাখে, তাকে বলা হয় গড় সময়। এর অর্থ হলো প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট এবং ঘড়ির দ্বারা গণনা করা প্রতিটি সময়বিভাগ, সময়ের অন্য কোন অভিন্ন বিভাগের সমান সময়কাল হবে। তবে একটি সূর্যঘড়ি, যা আকাশে সূর্যের তুলনামূলক অবস্থান বা আপাত সময় পরিমাপ করে, এইরকম অভিন্ন সময় রাখে না। একটি সূর্যঘড়ি দ্বারা রাখা সময়, বছরের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়। এর অর্থ হলো সেকেন্ড, মিনিট এবং সময়ের প্রতিটি বিভাজন বছরের বিভিন্ন সময়ে আলাদা আলাদা হয়। আপাত সময়ের তুলনায় গড় সময় দিয়ে পরিমাপ করা দিনের সময় 15 মিনিটের মতো আলাদা হতে পারে। তবে একটি একক দিন পরের দিনের থেকে খুব সামান্য পরিমাণে আলাদা হয়। 15 মিনিট সময়কাল বছরের একটি অংশ ধরে একটি ক্রমসঞ্চিত পার্থক্য। এই তফাৎটি মূলত সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর অক্ষের সাপেক্ষে পৃথিবীর কক্ষপথের তির্যক গতির কারণে হয়। 

    আপাত সৌর সময় এবং গড় সময়ের পার্থক্যটি প্রাচীনকাল থেকেই জ্যোতির্বিদরা স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু 17 শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সঠিক যান্ত্রিক ঘড়ি আবিষ্কারের আগে, সূর্যঘড়িই ছিল একমাত্র নির্ভরযোগ্য ঘড়ি এবং আপাত সৌর সময় ছিল সাধারণভাবে গৃহীত মান। 

 

একক


    রাশি:- 
    যে কোনো কিছু যাকে পরিমাপ করা যায়, তাকে রাশি বলে। যেমন- ঘরের মেঝের দৈর্ঘ্য আমরা মাপতে পারি। আমার গণিত বইয়ের ভর আমরা মাপতে পারি। কিংবা গতকাল আমি ঠিক কতক্ষণ অঙ্ক কষেছি, তাও মাপতে পারি। তাই দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, এগুলো সবই হচ্ছে রাশি। 

    কতকগুলি রাশি পরিমাপ করার সময় দিক উল্লেখ করতে হয়, আবার কতকগুলি রাশি পরিমাপের সময়ে দিকের প্রয়োজন হয় না। এই হিসেবে রাশিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- 1) স্কেলার রাশি এবং 2) ভেক্টর রাশি। 

    স্কেলার রাশি:- যে সব রাশি পরিমাপের সময়ে দিক উল্লেখ করতে হয় না, তাদের স্কেলার রাশি বলে। যেমন- দৈর্ঘ্য, ভর, সময় ইত্যাদি। 
    ভেক্টর রাশি:- যে সব রাশি পরিমাপের সময়ে দিক উল্লেখ করতে হয়, তাদের ভেক্টর রাশি বলে। যেমন- বেগ, ত্বরন ইত্যাদি। 

    এককের প্রয়োজনীয়তা:- ঘরের মেঝের দৈর্ঘ্য যদি আমি বলি 12 তাহলে ঠিক বোঝা যায় না বা বইয়ের ভর যদি বলি 0.15 বা আমি 20 সময় ধরে অঙ্ক কষেছি। দেখো এগুলো পড়তে পড়তেই কেমন যেন হাসি পায়! কিছু একটা ভুল হচ্ছে বলে মনে হয়! 
    তাই যদি বলি মেঝের দৈর্ঘ্য 12 ফুট বা বইয়ের ভর 0.15 কিলোগ্রাম বা আমি 20 মিনিট অঙ্ক কষেছি, তাহলে একটা সুস্পষ্ট ধারণা করা যায়। তাই কোন রাশি পরিমাপ করার সময়ে একটা নির্দিষ্ট এককের প্রয়োজন হয়। 

    একক:- কোন রাশি পরিমাপ করার সময় আমরা একটা নির্দিষ্ট, সুবিধাজনক মানকে প্রমাণ মান ধরে ওই জাতীয় রাশি পরিমাপ করি। ওই নির্দিষ্ট, সুবিধাজনক প্রমাণ মানকে ওই রাশির একক বলে। 
    এখানে বলা প্রয়োজন সুবিধাজনক মান কথাটি কেন এলো? আমরা যদি একটা বইয়ের দৈর্ঘ্যকে কিলোমিটারে মাপি বা আমার বাড়ি থেকে স্কুল যাবার রাস্তার দৈর্ঘ্যকে সেন্টিমিটারে মাপার চেষ্টা করি, তাহলে আমার মাপে ভুল হওয়ার পাশাপাশি আমাকে পাগোল বলতেও কেউ দ্বিধা করবে না! তাই কোন রাশি পরিমাপ করার সময় অবশ্যই সুবিধাজনক একক ব্যবহার করা উচিত। 

    দশমিক পদ্ধতিতে কোন একককে ছোট বা বড় এককে নিয়ে যাবার জন্য আমরা বিভিন্ন উপসর্গ ব্যবহার করি। যেমন- 
    সাধারণভাবে এগুলি বহুল প্রচলিত হলেও কিছু ক্ষেত্রে আরো বড় একক বা আরো অনেক ছোট এককের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রেও আমরা বিভিন্ন উপসর্গ ব্যবহার করি। যেমন- 
    আবার আমরা দেখব কতকগুলি রাশির একক অন্য কোন রাশির এককের উপর নির্ভরশীল। আবার কোন রাশির একক অন্য কোন রাশির এককের উপর নির্ভর করে না। 
    মূল একক বা প্রাথমিক একক:- সাধারণভাবে দৈর্ঘ্য, ভর এবং সময়ের একক অন্য কোন রাশির এককের উপর নির্ভরশীল নয়, তাই এদের একককে মূল একক বা প্রাথমিক একক বলে। 
    লব্ধ একক:- সাধারণভাবে দৈর্ঘ্য, ভর, সময়ের একক ছাড়া অন্যান্য রাশির একক মূল এককের সাহায্যে নির্ণয় করা হয়। তাই সেই সমস্ত রাশির একককে লব্ধ একক বলে। যেমন- ক্ষেত্রফলের একক, আয়তনের একক, বেগের একক ইত্যাদি।
 
    সিজিএস পদ্ধতি:- পরিমাপের যে পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের একককে সেন্টিমিটার, ভরের একককে গ্রাম এবং সময়ের একককে সেকেন্ড ধরে সমস্ত রাশি পরিমাপ করা হয়, তাকে সিজিএস পদ্ধতি বলে। 

    f p s পদ্ধতি:- পরিমাপের যে পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের একককে ফুট, ভরের একককে পাউন্ড, সময়ের একককে সেকেন্ড ধরে সমস্ত রাশি পরিমাপ করা হয়, তাকে f p s পদ্ধতি বলে। 

    এম কে এস পদ্ধতি:- পরিমাপের যে পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের একককে মিটার, ভরের একককে কিলোগ্রাম, সময়ের একককে সেকেন্ড ধরে সমস্ত রাশি পরিমাপ করা হয়, তাকে এম কে এস পদ্ধতি বলে। 

    S.I. পদ্ধতি বা আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি:-পরিমাপের যে পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের একককে মিটার, ভরের একককে কিলোগ্রাম, সময়ের একককে সেকেন্ড, তড়িৎ প্রবাহের একককে অ্যম্পিয়ার, তাপমাত্রার একককে কেলভিন, পদার্থের পরিমাণের একককে মোল, আলোক তীব্রতার একককে ক্যান্ডেলা ধরে সমস্ত রাশি পরিমাপ করা হয়, তাকে S.I. পদ্ধতি বা আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি বলে।