প্রতিদিন একটা করে নতুন কিছু লেখা। যাইহোক, আপাতত নিয়ে ফেললাম।
আমি শুরু করবো, আমার পেশাকে গুরুত্ব দিয়ে। অর্থাৎ যা কিছু এখানে প্রতিদিন লিখবো, তাতে গণিতের যোগ থাকবে। আজকে, একটা গল্প দিয়ে শুরু করবো।
অনেক প্রাচীনকালে, তখন মানুষ ঠিকভাবে লিখতে পড়তে জানতো না। সবে পশুপালন ও চাষাবাদ শিখেছে। চাষাবাদের কারণে এক জায়গায় বসবাস করতে হচ্ছে। পশু খামার বসবাসের কাছাকাছি জায়গায় তৈরী হয়েছে।
কিন্তু সমস্যা একটা থেকেই গেছে। প্রতিদিন সকালে যতগুলি পশু ছড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়, ঠিক ততগুলিই সন্ধ্যায় ফেরে কিনা, নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই।
হঠাৎই দলপতি একদিন আবিষ্কার করে ফেলেন, কতকগুলি বাচ্চা ছেলেমেয়ে বিভিন্ন কালারের ছোট ছোট পাথর নিয়ে খেলছে। শুধু খেলছে বললে ভুল বলা হবে। তারা তাদের খেলায় হিসাবও রাখছে।
এই পাথরগুলি বেশ ভালো তো। এই পাথরগুলির সাহায্যে যদি পশুর সংখ্যার হিসাব রাখা হয়, তাহলে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আর তিনি নিজেই যখন দলপতি, তখন প্রয়োগের ক্ষেত্রে তো কোনো অসুবিধাই নেই।
যেমন ভাবা তেমন কাজ! দলপতি সকলকে ডেকে পদ্ধতিটি সকলকে দেখতে বলেন। সবাই দেখতে থাকে। একটা দুটো করে ধূসর রঙের পাথর এক জায়গায় জড়ো করা হয়। যখন দশ টি পাথর জড়ো করা হয়, তখন দশটি ধূসর পাথরের পরিবর্তে একটি সাদা রঙের পাথর নেওয়া হয়। আবার একটি দুটি করে ধূসর রঙের পাথর বাড়ানো হয়।
একইভাবে দশটি ধূসর রংয়ের পাথর এক জায়গায় জড়ো হলে, দশটি ধূসর পাথরের পরিবর্তে আরেকটি সাদা পাথর নেওয়া হয়। এইভাবে চলতে চলতে দশটি সাদা পাথর জমে গেলে দশটি সাদা রঙের পাথরের পরিবর্তে একটি লাল রঙের পাথর নেওয়া হয়।
আবার লাল রঙের পাথর দশটির পরিবর্তে একটি গোলাপি রঙের পাথর নেওয়া হয়।
সকলে সমবেত ভাবে দলপতির জয়গান করে। ভাগ্যিস দলপতি সেদিন লক্ষ্য করেছিলেন! না, হলে হয়তো পশুর সংখ্যার গণনা কখনোই হতো না।
তবে সেদিনকার সেই দলপতির দেখা, যে কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আজকে আমরা তা বুঝতে পারি। হয়তো কালের নিয়মে দলপতি আজকে নেই। তার নামটাও আমরা জানি না। কিন্তু তার আবিষ্কার বংশ পরম্পরায় রয়ে গেছে। আবিষ্কারটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, প্রতিটি মানুষ তার উত্তরসূরিদের শিখিয়ে গেছে।
ক্রমে ক্রমে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু হল। শুরু হলো লেনদেনের। একটা জিনিসের পরিবর্তে অন্য জিনিসের। সাধারণত বস্তুই ছিল ব্যবসার বিষয়। দৈনন্দিন জীবনে যে সকল বস্তু ব্যবহার করা হতো, তাই দিয়েই চলতো ব্যবসা।
কিন্তু আমার দলের যা প্রয়োজন, তা তো আমাদের কাছে নেই। তাই যাদের কাছে সেই বস্তু আছে, আমাদের কাছ থেকে তাদের অন্য বস্তু দিয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় বস্তু নেওয়া। এই ভাবেই শুরু হয় বিনিময় প্রথা বা ব্যবসা।
কিছু ফলমূল ও পশুর মাংস। এই ছিল তখনকার বিনিময়ের মাধ্যম। এই বিনিময়ের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে সখ্যতা। পরে দেখা যায় এই সখ্যতা থেকেই জন্ম নেয় ঋণ গ্রহণের মানসিকতার। যা আরো পরবর্তীকালে আমাদের নতুন কিছু শিখতে বাধ্য করে। আমার এখন প্রয়োজন মাংস। কিন্তু আমার কাছে ফলমূল বা মাংস কোনোটিই নেই। যাদের কাছে আগে ফলের বিনিময়ে মাংস আমি পেয়েছি, তাদের কাছেই চলে আবদার। তারাও রাজি হয়। বিনিময়ে পরে তাদের ফলমূল দিতে হবে।
ক্ষুধার তাড়নায় অল্প সময়েই মানুষ রপ্ত হয়ে যায়। এই ঋণ গ্রহণের মাধ্যমেই বিভিন্ন চিহ্নের উদ্ভব ঘটে। কোনো জায়গায়, সাধারণত কোনো বড় গাছের গায়ে, অথবা কোনো বিশেষ পাথরে চিহ্নগুলি লেখা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের চিহ্নের প্রমাণ আমরা পেয়েছি।
সংখ্যা প্রকাশ করার জন্য এইসব চিহ্নগুলিকেই অঙ্ক বলে।
0, 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9 এই দশটি চিহ্নকে আমরা অঙ্ক বলব।
অঙ্কের কাজ হল শুধুমাত্র সংখ্যা তৈরি করা।
সংখ্যা গঠিত হবার সময় একটি বা একাধিক অঙ্ক একবার বা একাধিকবার ব্যবহার করা হয়। আবার আবার সংখ্যা গঠিত হওয়ার সময়, অঙ্ক ছাড়াও আরো কিছু চিহ্ন কাজে লাগাতে দেখি। যেমন দশমিক বিন্দু, বর্গমূলের চিহ্ন, ভগ্নাংশের লব ও হরের মধ্যবর্তী রেখা ইত্যাদি।
অঙ্কের উপর কখনোই কোনো বীজগাণিতিক বা অন্য কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় না।
No comments:
Post a Comment