অনুপাত
একই জাতীয় দুইটি রাশির মধ্যে তুলনা করাকে অনুপাত বলে। a এবং b দুইটি একই জাতীয় রাশি হলে, তাদের অনুপাত হবে
a : b, এবং ইহাকে a ইস টু b ( a অনুপাত b ) আকারে পড়া হয়। পাটিগণিতে দুইটি বাস্তব সংখ্যার অনুপাতকে ভগ্নাংশ আকারেও লেখা যায়। যেমন-
এখানে অনুপাতের প্রথম পদটিকে পূর্বপদ (antecedent) এবং দ্বিতীয় পদটিকে উত্তরপদ (consequent) বলে।
অনুপাতে রাশি বা সংখ্যাগুলি সমজাতীয় বলে, অনুপাতের কোন একক নেই, অর্থাৎ অনুপাত একক বর্জিত।
এখানে একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। যেমন- রাম এবং শ্যামের বয়স যথাক্রমে 10 বছর এবং 12 বছর হলে, তাদের বয়সের অনুপাত হবে
10 : 12 বা 5 : 6
সাধারণত অনুপাত প্রকাশ করার সময়ে এমন সংখ্যায় করা হয় যাদের গ.সা.গু. যেন 1 হয়, অর্থাৎ সংখ্যাগুলি যেন পরস্পর মৌলিক হয়।
লঘু অনুপাত:- কোন অনুপাতের পূর্বপদ, উত্তরপদের থেকে ছোট হলে, অর্থাৎ ভগ্নাংশ আকারে লিখলে, 1 এর থেকে ছোট হলে, অনুপাতটিকে লঘু অনুপাত বলে।
যেমন- 2 : 3, 5 : 7, 11 : 15 ইত্যাদি।
গুরু অনুপাত:- কোন অনুপাতের পূর্বপদ, উত্তরপদের থেকে বড় হলে, অর্থাৎ ভগ্নাংশ আকারে লিখলে, 1 এর থেকে বড় হলে, অনুপাতটিকে গুরু অনুপাত বলে।
যেমন- 3 : 2, 7 : 5, 15 : 11 ইত্যাদি।
সাম্যানুপাত:- কোন অনুপাতের পূর্বপদ এবং উত্তরপদ সমান হলে, অর্থাৎ ভগ্নাংশ আকারে লিখলে, 1 হলে, অনুপাতটিকে সাম্যানুপাত বলে।
যেমন- 1 : 1, 3 : 3 ইত্যাদি।
দুইটি রাশি অপেক্ষা বেশি সংখ্যক রাশির ক্ষেত্রেও অনুপাত নির্ণয় করা যায়। যেমন রাম শ্যাম ও যদুর বয়স যথাক্রমে 10 বছর 12 বছর এবং 8 বছর হলে, তাদের বয়সের অনুপাত হবে
10 : 12 : 8 অর্থাৎ 5 : 6 : 4
সরল অনুপাত:- দুইটি রাশির অনুপাতকে সরল অনুপাত বলে। তাই লঘু অনুপাত, গুরু অনুপাত এবং সাম্যানুপাত প্রত্যেকেই সরল অনুপাত।
ব্যস্ত অনুপাত বা বিপরীত অনুপাত:- কোনো সরল অনুপাতের পূর্বপদকে উত্তরপদ ধরে, এবং উত্তরপদকে পূর্বপদ ধরে, প্রাপ্ত অনুপাতকে প্রদত্ত অনুপাতের ব্যস্ত অনুপাত বা বিপরীত অনুপাত বলে।
যেমন- 2 : 3 এর ব্যস্ত অনুপাত 3 : 2
মিশ্র অনুপাত বা যৌগিক অনুপাত:- একাধিক সরল অনুপাতের পূর্বপদ গুলির গুনফলকে পূর্বপদ ধরে, এবং উত্তরপদ গুলির গুণফলকে উত্তরপদ ধরে, প্রাপ্ত অনুপাতকে প্রদত্ত অনুপাত গুলির মিশ্র অনুপাত বা যৌগিক অনুপাত বলে।
যেমন- 2 : 3, 5 : 7, 9 : 10 এর মিশ্র অনুপাত বা যৌগিক অনুপাত হল
2×5×9 : 3×7×10 অর্থাৎ 3 : 7
দ্বিগুণানুপাত:- যে কোনো সরল অনুপাতের পূর্বপদের বর্গকে পূর্বপদ ধরে, এবং উত্তরপদের বর্গকে উত্তরপদ ধরে যে অনুপাত পাওয়া যায়, তাকে প্রদত্ত অনুপাতের দ্বিগুণানুপাত বলে।
যেমন- 5 : 6 এর দ্বিগুণানুপাত হল 25 : 36
দ্বিভাজিত অনুপাত:- যে কোনো সরল অনুপাতের পূর্বপদের বর্গমূলকে পূর্বপদ ধরে, এবং উত্তরপদের বর্গমূলকে উত্তরপদ ধরে, প্রাপ্ত অনুপাতকে প্রদত্ত অনুপাতটির দ্বিভাজিত অনুপাত বলে।
যেমন- 36 : 49 এর দ্বিভাজিত অনুপাত হল 6 : 7
ধারাবাহিক অনুপাত:- দুইটি সরল অনুপাতের মধ্যে প্রথম অনুপাতটির উত্তরপদ এবং দ্বিতীয় অনুপাতটির পূর্বপদ পরস্পর সমান হলে, তাদের ধারাবাহিক অনুপাতে প্রকাশ করা যায়।
যেমন- 3 : 5 এবং 5 : 7 দুইটি অনুপাত হলে তাদের ধারাবাহিক অনুপাত হবে
3 : 5 : 7
দুইয়ের অধিক সরল অনুপাতের ক্ষেত্রেও ধারাবাহিক অনুপাতে প্রকাশ করা যায়।
কোন অনুপাতের উভয়পদকে একই সংখ্যা দ্বারা গুণ বা ভাগ করলে, অনুপাতটির মানের কোন পরিবর্তন হয় না। যেমন-
3 : 7 = 3 × 2 : 7 × 2 = 6 : 14
আবার
8 : 12 = 8 ÷ 4 : 12 ÷ 4 = 2 : 3
কোন অনুপাতের রাশি গুলি সর্বদা ধনাত্মক হয়।
কতকগুলি প্রয়োজনীয় ধর্ম:-
1) ব্যস্তকরণ ( Invertendo ):-
a : b = c : d হলে, b : a = d : c হবে।
2) একান্তরকরণ ( Alternendo ):-
a : b = c : d হলে, a : c = b : d হবে।
3) যোগ প্রক্রিয়া ( Componendo ):-
a : b = c : d হলে, ( a + b ) : b = ( c + d ) : d হবে।
4) ভাগ প্রক্রিয়া ( Dividendo ):-
a : b = c : d হলে, ( a - b ) : b = ( c - d ) : d হবে।
5) যোগ ভাগ প্রক্রিয়া ( Componendo - Dividendo ):-
a : b = c : d হলে, ( a + b ) : ( a - b ) = ( c + d ) : ( c - d ) হবে।
6) সংযোজন প্রক্রিয়া (Addendo) :-
a : b = c : d = e : f = g : h হলে, প্রত্যেকটি অনুপাতের মান
= ( a + c + e + g ) : ( b + d + f + h )